You dont have javascript enabled! Please enable it!

আনোয়ারা থানা কমপ্লেক্স অভিযান-১, চট্টগ্রাম

বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে ১০ কিমি উত্তর-পূর্বদিকে এবং কর্ণফুলি নদীর মোহনা থেকে ৮ কি।মি। পূর্ব্দিকে আনোয়ারা থানার অবস্থান। থানা কমপ্লেক্স থেকে ৪ কি।মি। দক্ষিণ শংখ নদী। ৫ কি. মি. পূর্ব দিকে চাঁনখালি খাল। থানা কমপ্লেক্সের তিনশত গজ উত্তর দিকে অবস্থিত ছিল সার্কেল অফিসারের (সিও) অফিস। থানা কমপ্লেক্স বরকল আনোয়ারা সড়কের ঠিক পাশেই অবস্থিত। এই থানা থেকে ৬ কি.মি পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছিল মেরিন একাডেমি যেখানে পাক নেভির একদল সদস্য অবস্থান করত। থানাসদরে কিছু বিল্ডিং থাকলেও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল বৃক্ষরাজ। শত্রুদের বাধা প্রদান করে পরবর্তীতে নিরাপদ দূরত্বে স্বরে যাওয়া। তিন গ্রুপে মিলে মোট ৪০/৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ভোর পাঁচটায় কমান্ডারের নির্দেশ অপারেশন শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। শাহজাহান ইসলামীবাদী ও সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্ব এই অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়। রাত ১২ টার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের বরকল শেল্টার থেকে কমান্ডার সার্জেন্ট আলমের নেতৃত্ব পায়ে হেঁটে ১০/১২ জনের একটি দল আনোয়ারা বারখানইস্থ কমান্ডার আবদুল লতিফের বাড়িতে অস্থায়ী শেল্টারে অবস্থান নেয়। ১০/১২ জনের আরেকটি দল আনোয়ারা থানার কোয়ার্টার মাইল পূর্বপাশে মুক্তিযোদ্ধা স্বপনের লোক-সোনা মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেয়। আনোয়ারা কেলিশহর থেকে ১০/১২ জনের আরেকটি গেরিলা গ্রুপ পূর্বের পরিকল্পনা ও যোগাযোগের ভিত্তিতে সোনা মিয়ার বাড়িতে মিলিত হয়। রাত ১২টার দিকে অপারেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত শাহজাহান ইসলামাবাদী ও সার্জেন্ট মহিউল আলম উক্ত দুটি শেল্টারে সবার সাথে যোগাযোগ করেন। রাত একটার মধ্যে সবগুলো দল আনোয়ারা থানার দুই কিলোমিটার পূর্বদিকে একটি গোপন আশ্রয়কেন্দ্রে মিলিত হয়। আক্রমণের সময়ক্ষণ নির্ধারণ করে উপদলগুলোকে স্ব স্ব দায়িত্ব বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে কাজী ইদ্রিস, ফেরদৌস ইসলাম, নুরুল ইসলামসহ প্রায় ১০/১২ জনের কভারিং কাট অব ও হোল্ডিং পার্টি-১ আনোয়ারা প্রাইমারি স্কুলের একশত গজ পূর্বদিকে নির্দিষ্ট স্থান পুকুরপড়ে অবস্থান নেয়। তাঁদের সাথে কিছু রাইফেল ও গ্রেনেড ছিল। শাহজাহান ইসলামাবাদীর নেতৃত্ব আবদুর সবুর, মজিদ, মঞ্জুর আলমসহ আরো প্রায় ১০/১২ কভারিং, কাট অব ও হোল্ডিং পার্টি-২ কিছু রাইফেল ও গ্রেনেডসহ আনোয়ারা থানার পশ্চিম দিকে ১৫০ গজ দূরে আনোয়ারা গ্রামের মধ্যে অবস্থান নেয়। হাবিলদার আবু ইসলামের নেতৃত্বে কাসেম, জাব্বার, আইয়ুবসহ প্রায় ১৫/২০ জনের এ্যাকশন পার্টি আনোয়ারা থানা দক্ষিণদিকে আনোয়ারা বরকেল রাস্তার পাশ থেকে ১০০ গজ পশ্চিম দিকে একটি মন্দিরের পাশে অবস্থান নেয়। রাত ৪টার মধ্যে সবাই পজিশন নেয়ার কাজ সমাপ্ত করে এবং দলনেতার ফায়ারের আদেশের অপেক্ষায় থাকে। পূর্বেই সিদ্ধান্ত হয় যে, ভোর ৫টার সময় দলনেতা সার্জেন্ট আলমের দল থেকে থানা এবং সিও অফিস লক্ষ্য করে ফায়ার ওপেন করা হবে। সাথে সাথে অন্য দুটি গ্রুপও ফায়ার ওপেন করবে ঠিক ৫টায় পরিকল্পনা মোতাবেক দলনেতা আনোয়ারা থানা ও সিও অফিস লক্ষ্য করে ফায়ার শুরু করলে বাকি গ্রুপ দুটো থেকে ফায়ার শুরু হয়। আনোয়ারা থানা ও রাজাকারের অবস্থানগুলো থেকেও এলোপাতাড়ি চারদিক পাল্টা গুলি হতে থাকে। আনোয়ারা স্কুলে কয়েকজন রাজাকার অবস্থান নিয়েছিল। তারা তাদের অবস্থান থেকে অপারেশন দলের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তাদের গুলিতে হাবিলদার আবু ইসলাম হাতে গুলিবিদ্ধ হন। তবুও তিনি হামলা বন্ধ করেননি। এভাবে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট গুলিবিনিময় এক ফাকে হাবিলদার আবু ইসলাম ও আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হামাগুড়ি দিয়ে থানার পেছন দিকে পৌঁছে যান। থানায় অবস্থানরত প্রায় ১০ জন পুলিশ (সঠিক সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে) ও রাজাকার গেরিলাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। থানার অভ্যন্তরে ইবিআরসির চারজন রিক্রুট-এর সন্ধ্যান পাওয়া যায়। এদের একজন অপারেশনের সময় মারা যায়। পাকবাহিনী তাঁদেরকে ধরে নিয়ে এসেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করার শর্তে তাদেরকে সাথে নিয়ে নেওয়া হয়। থানার মধ্যে অবস্থানরত যেসকল রাজাকার হাতেনাতে ধরা পড়ে তাদেরকে থানার পাশে পুকুরপারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে হাবিলদার আবু ইসলামসহ তিনজন গুলিতে আহত হয়। এছাড়া বেশিকিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এই অপারেশনের ফলে এই এলাকায় রাজাকারদের উৎপাত কমে যায়। রাজাকাররা এই এলাকা ত্যাগ করে আনোয়ারা পশ্চিম সীমান্তে গহিরায় চলে যায়। ঘটনার পরেরদিন চট্টগ্রাম শহর থেকে এসে বেশ কিছু আর্মি আনোয়ারা থানার আশেপাশে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে লুটপাট করে চলে যায়।
[৫৯৭] কে.এম.আহসান কবীর

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!