আমছিপুরে যুদ্ধ, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল
১৩ ডিসেম্বর শত্রু টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানাধীন চৌহালী হতে বংশী নদীর চর দিয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা হয়। এমতাবস্তায় বালিয়ায় আগরতাল বেতার কেন্দ্র হতে খবর আসে ভারতীয় সৈন্যদল হেলিকপ্টার যোগে বাংলাদেশের বালিয়া এলাকায় আসছেন আপনারা তাদেরকে রিসিভ করুন। এই সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধার একটা দল অস্ত্র রেখে তাদেরকে স্বাগতম জানানোর উদ্দেশ্যে বংশী নদীর চরে উপস্থিত হলে। ওখানে উপস্থিত হয়েই দেখেন প্রচুর শত্রু লাইন ধরে বংশী নদীর চর দিয়ে ফায়ার করতে করতে সামনের দিক অগ্রসর হচ্ছে। সাতে ঘোড়ায় চড়ে বোরকয়া পরিহিত পথ প্রদর্শকের দল। স্বাগতম জানানোর পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর খপ্পরে পড়লেন। শত্রু বুঝতেই পারেনি যে, এরা মুক্তিযোদ্ধা। যদি জানতে পারত তারা মুক্তিযোদ্ধা তাহলে জীবনে নেমে আসত অমানিশার ঘোর অন্ধকার। শত্রুরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাধারণ জনগণ মনে করে তাদের কাউকে বহন করতে দেয় এ্যামুনিশনের বস্তা, কাউকে অস্ত্রশস্ত্র, কাউকে রেশন আবার কারো ঘাড়ে জুতার বস্তা। বালিয়া এলাকা হতে সতেরজনকে ধরে নিয়ে শত্রুরা তাদের বিভিন্ন জিনিসপত্র বহন করার কাজে ব্যবহার করে। শত্রুরা যখন যাদবপুর ইউনিয়নের ভাগ্যেশ্বরীর নিকটবর্তী আমছিপুর এলাকায় পৌঁছে তখন কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী এবং কমান্ডার বেনজিরের দল তাদেরকে আক্রমণ করে। এই ফাঁকে বালিয়া এলাকা হতে যে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে তারা তাদের জিনিসপত্র বহন করার কাজে ব্যবহার করেছিল, তারা সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং উল্টো শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমছিপুর এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। শত্রুরা এই যুদ্ধে জয়লাভ করে। শত্রুর একটি ঘোড়াকে মুক্তিযোদ্ধারা আহত করলে আহত ঘোড়া ও আহত আরোহীদের শত্রুরা গুলি করে হত্যা করে। শত্রুর লাশটিকে নদীতে ফেলে দেয়া হয় এবং ঘোড়াটিকে পুঁতে রাখা হয়। শত্রু দলের একটি ছেলে পথ হারিয়ে ফেলে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের এলাকায় প্রবেশ করে পরবর্তীতে ছেলেটিকে বালিয়ার পার্শ্ববর্তী গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ছেলেটির নাম রাজা। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের চরম ক্ষতি হয়। শত্রুরা আমছিপুর এলাকায় অসংখ্য ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয় যেখানে গবাদি পশু ও মানুষ ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের তিনজন এই যুদ্ধে শহীদ হন। শাহীন মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ নিজ নিজ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তিনজন হলে মোঃ আবুল হোসেন, মোঃ মেছের আলী এবং মোঃ ওয়াহেদ আলী।
[৫৯৪] সংকলন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত