You dont have javascript enabled! Please enable it! আগালর যুদ্ধ, নবাবগঞ্জ, ঢাকা - সংগ্রামের নোটবুক

আগালর যুদ্ধ, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

আগলা নবাবগঞ্জ, ঢাকা এলাকায় অক্টোবরের ৪র্থ সপ্তাহের প্রথম দিকে কার্তিকের আমন ধান কাটার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানী সৈন্যদের যে যুদ্ধ হয় তা আগলার যুদ্ধ নামে পরিচিত লাভ করে। আগলা পূর্বপাড়া গ্রামের চৌধুরী মোহাম্মদ হাসেম দুলারা মিয়া ২৩ শে মার্চ ১৯৭১ নিজ বাড়ির ছাদে পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে ছিলেন। কথিত পাকিস্তানী এই দালালকে পাড়াগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা সেপ্টেম্বরের দিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এই দালালটি আবার পাকিস্তানের বড় দালাল ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের আত্মীয় ছিল এই সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর আবদুল মালেকের সঙ্গে দেখা করে আগলা এলাকায় অক্টোবরের ৪র্থ সপ্তাহে পাকিস্তানী সৈন্য পাঠাতে সক্ষম হয় এবং এই সৈন্যরা (কার্তিকের ২য় সপ্তাহ প্রথম দিকে) নদী পথে লঞ্চে সরাসরি ঢাকা থেকে আগলা পৌঁছে। গ্রাম বাংলার অন্যান্য এলাকার মতো এই এলাকায় তখন আমন ধান কাটার মৌসুম সবেমাত্র শুরু হয়েছে। বর্ষা প্রায় শেষ, নদীনালার পানিও প্রায় কমে গিয়েছে। খাল-বিলে তখন নৌকা চালানো খুব কঠিন, ঠিক এই সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা আগলা আসে এবং তাদের বহনকারী লঞ্চটি আগলা খালের বটতলা নামক স্থানে এসে থেমে যায়। ফলে পাকিস্তানী সৈন্যদের বটতলা ঘাটেই নামতে হয়। বটতলা থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা জল-কাদা পার হয়ে পেশকার বাড়ি পৌছালে পোদ্দার বাড়ি ও জেলে বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রতিরোধ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাক সৈন্যদের একটি নৌকা ডুবে যায় এবং চারজন পাক সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে পাকিস্তানী সৈন্যরা ভীত হয়ে পালাতে বাধ্য হয় এবং পালানোর পথে গ্রামের আটজন সাধারণ নাগরিককে হত্যা করে। এই শহীদরা হলেন তিলক, জেহের আলী, আবদুর রহমান, আবদুস ছাত্তার, রওশন সিকদার, আরকম আলী, একাব্বর বেপারী ও একজন ফকির যার নাম জানা যায়নি এবং ইসাদ আলীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা আগলা থেকে নবাবগঞ্জ পালাবার পথে আগলা চৌকিঘাটা জনমঙ্গল হাই স্কুলে ঘাঁটি করে একরাত অবস্থান করে এবং এখানেও তারা ইছামতি নদীর ঘাটে ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে একজন সুন্নাত আলী আহত অবস্থায় মৃত্যুর ভান করে পরে বেঁচে যায়। এই শহীদরা হলেন- নিমাই গোবিন্দ ও মঙ্গল। আগলার যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর বেশ কিছু গোলাবারুদ এর পাশাপাশি একটি অতি আধুনিক রাইফেল (কালাশনিকভ রাইফেল) মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এই যুদ্ধে যে সব মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায় তাঁরা হলে-শওকত হোসেন আঙুর, হাফিজ, নজরুল ও জাহাঙ্গীরসহ ৭ জনের একটি বিরাট গ্রুপ। সুবেদার রাহাত আলী, আগলা। জমাদার আবদুর রফিক, আগলা। সিপাই শাকিল আহম্মেদ, আগলা। সিপাই মোহাম্মদ জালাল মোহাম্মদ মোন্নাফ, আগলা। সিপাই মোহাম্মদ জসিম, গালিমপুর। মোহাম্মদ ইসহাক, আগলা। মোহাম্মদ সগির, আগলা। গোলাম হোসেন, আগলা। আবুল কালাম আজাদ দারু ও আরও বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা যাদের নাম জানা যায়নি।
[৬৯ হারুন-অর-রশিদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত