আক্কেলপুর রেলস্টেশন আক্রমণ, জয়পুরহাট
আক্কেলপুর, জামালপুর, জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, হিলি সান্তাহার-এসব ছোট ছোট শহ্র একমাত্র রেল যোগাযোগের মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত ছিল। ফলে সীমান্ত এলাকার পাকসেনা ক্যাম্পগুলোতে খাদ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি সরবরাহের জন্য রেলপথেই ছিল প্রধান মাধ্যম। ফলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রতিটি রেলস্টেশনকেই একটি ছোটখাটো হিসেবে ব্যবহার করত। স্টেশনে অপেক্ষমাণ দ্রব্যসামগ্রী পাহারা দেয়া ছিল এ সকল স্টেশনে অপেক্ষমাণ দ্রব্যসামগ্রী পাহারা দেয়াই ছিল এ সকল স্টেশন ক্যাম্পের সৈন্য ও রাজাকারদের কাজ। উল্লেখিত শহরগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিহারির বসবাস থাকায় ওইসব অঞ্চলের রাজাকারদের অধিকাংশ ছিল বিহারি। যোগাযোগের মাধ্যম, রসদ সরবরাহ ও বিহারীদের আধিপত্য ইত্যাদি কারণে আক্কেলপুর রেলস্টেশনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বদলগাছি, পত্নীতলা, ধামরাইহাট ইত্যাদি অঞ্চল আক্কেলপুরের সরাসরি পশ্চিমে অবস্থিত এবং তদানীন্তন সময়ে এ শহরগুলো চলাচলযোগ্য কাঁচা রাস্তা দ্বারা সংযুক্ত ছিল। এ সকল শহরে স্থাপিত পাকিস্তানী ক্যাম্পে রসদ ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হতো আক্কেলপুর রেলস্টেশনের মাধ্যমে। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাতে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক বেশ কয়েকবার আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। তার মধ্যে ১১ সেপ্টেম্বর ও ১৫ নভেম্বর ১৯৭১-এর আক্রমণ দুটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধের পরিকল্পনা জামালগঞ্জ রেলস্টেশনের আক্রমণের অনুরূপ। মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে রেলওয়ে ব্রিজটি বিস্ফোরক দ্বারা ধ্বংসের মাধ্যমে পাকসেনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ বা তাদের মনোযোগ ব্রিজটির দিকে ফেরানো এবং তারপর রেলস্টেশনে মূল আক্রমণ পরিচালনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল রেলস্টেশনে স্তূপীকৃত পাকসেনাদের রসদ ধ্বংস করা ও সম্ভব হলে অস্ত্র-সরঞ্জাম ছিনিয়ে আনা। পরিকল্পনা মাফিক ১৫ নভেম্বর ১৯৭১ রাত ১২টার পরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রেলওয়ে ব্রিজ আক্রমণ করে ব্রিজটি দখল করে বিস্ফোরণ ঘটায়। মুক্তিবাহিনী আক্রমণে রাজার বাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে করতে আক্কেলপুর শহরের দিকে আসতে থাকে। গোলাগুলির শব্দে আক্কেলপুর রেলস্টেশনে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনাদল ও রাজাকাররা রেলওয়ে ব্রিজের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ইতিমধ্যে ব্রিজটি দখল করার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিক থেকে মুক্তিবাহিনী মূল দল রেলস্টেশনে আক্রমণ পরিচালনা করে। ক্ষণস্থায়ী এ আক্রমণে রেলওয়ে ব্রিজটি ধ্বংস হওয়া ছাড়া আর কোনো সফলতার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
[৫৬] সংকলন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত