আজমীরীগঞ্জ আক্রমণ, হবিগঞ্জ
মুক্তিযুদ্ধের সময় আজমীরীগঞ্জে যে কয়টি অপারেশন হয় তার প্রায় সব কয়টিই ৫ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিবাহিনীরা করেছে। ৫ মে পাকিস্তানী বাহিনী আজমীরীগঞ্জ আসার পর থেকে থানা ভবনে ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের দোসর সিরাজ মিয়ার বাড়িতে ছিল রাজাকারদের শক্ত ঘাঁটি। আজমীরীগঞ্জ ভাটি এলাকায় হওয়ায় সারা বছরই জলপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে। যে কোনো সময় মুক্তিযোদ্ধারা জলপথে আসতে পারে, এই ভয়ে পাকিস্তানী বাহিনী বিকাল ৫ টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কার্ফু দিয়ে রাখত। কোনো নৌকা পূর্বে তল্লাশী না করে বাজারে ভিড়তে দিত না। আজমীরীগঞ্জ থানা আক্রমণের দায়িত্ব পড়ে সালেহ চৌধুরীর ওপর। তিনি এই অবস্থায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। একটি বৃহদায়তন ব্যবসায়ী নৌকায় ত্রিশ জন মুক্তিযোদ্ধার তিনটি দল হাটবার বিকেল চারটায় গঞ্জে পৌঁছে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেন। থানা ছাড়াও রাজাকার ঘাঁটি ও দালাল সিরাজের বাড়ি আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল। আজমীরীগঞ্জে পৌঁছার পূর্বে জনবানবহীন শুইয়ারগাঁও-এ পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি লক্ষে তড়িৎ ছুটে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজমীরীগঞ্জ থানা রাজাকার ঘাঁটি ও দালাল সিরাজের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে সফলতার সাথে। সংখ্যায় রাজাকার ও পাক মিলিশিয়া বেশি হলেও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সুপরিকল্পিত হামলার মুখে। এই সফলতা আশরাফ মাস্টারের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার দল ও কৃষি বিশেষজ্ঞ ব্রজেন্দ্র চৌধুরীর সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছিল।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত