আকবর বাহিনী
আকবর হোসেন মিয়া ও তাঁর গেরিলা বাহিনীর কথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায়া স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও অধিনায়ক ছিলেন আকবর হোসেন মিয়া। এই কারণে দুর্ধর্ষ এই গেরিলা বাহিনী আকবর বাহিনী হিসাবে পরিচিত লাভ করে। দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও নিষ্ঠুর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচার থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার জন্য মাত্র কয়েকটি রাইফেল নিয়ে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে তিনি এই বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি তাঁর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করে হানাদারদের বিরুদ্ধে সফল যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
আকবর হোসেন ছিলেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার শ্রীলোক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। রাজনৈতিকভাবে তিনি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনী বাঙালীদের ওপর আক্রমণ চালায়। হানাদারদের তীব্র আক্রমণে নিরস্ত্র বাঙালী দেশেহারা হয়ে পড়ে। এই সময় আকবর হোসেন হানাদারদের প্রতিরোধের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। প্রতিরোধের জন্য আকবর বাহিনীর প্রথমদিকে তেমন কোনো আধুনিক অস্ত্র ছিল না। প্রতিরোধকারী জনতা মাগুরার পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিমের নিকট গিয়ে ট্রেজারি থেকে অস্ত্র দাবি করে। তিনি রাজি না হলে তার ওপর আক্রমণ করে অস্ত্র কেড়ে নেয়া হয়। আকবর হোসেন মাত্র ৬টি রাইফেল ও সামান্য কিছু গোলাবারুদ নিয়ে এবং কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তাঁর এই কাজে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সর্বস্তরের জনসাধারণ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। সকলের সহযোগিতা তিনি খামারপাড়া গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেন। এই ক্যাম্পে আনসার কমান্ডার আব্দুল মান্নান, সুবেদার আব্দুল ওহাব, হাবিলদার শাহজাহান, আমজাদ হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও ইব্রাহিমসহ আটশত মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাহিনী পরিচালনার জন্য অনেক অর্থশালী ব্যক্তি অর্থ সাহায্য করতেন। স্থানীয় জনসাধারণ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজনীয় সাহায্য নিতে আসতেন।
’৭১ মে মাসের ১৭ তারিখ থেকে শত্রুর ওপর আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকেন। বাংলাদেশ মুক্ত না হওয়ার পর্যন্ত তিনি অসংখ্য যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। আকবর বাহিনীর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হলো, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানা দখল, আলফাপুরের যুদ্ধ, শ্রীপুর যুদ্ধ, ইছাখাদা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ, মাগুরা আনসার ক্যাম্প আক্রমণ, মালাশিয়ার যুদ্ধ, বরিশাটের যুদ্ধ, বারইপাড়ার যুদ্ধ, খামারপাড়া যুদ্ধ, বিনোদপুর যুদ্ধ, নাকোলের যুদ্ধ, কামান্নার যুদ্ধ ও মাগুরা বিজয়। আকবর বাহিনীর আক্রমণ বহু পাক সেনা নিহত হয়। বিভিন্ন যুদ্ধে এই বাহিনীর ৪১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মোঃ সিদ্দিকুর রহমান স্বপন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত