You dont have javascript enabled! Please enable it!

গজালিয়া গেট গণহত্যা (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১)

গজালিয়া গেটের অবস্থান হলো বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সুরখালী ইউনিয়নটি ছিল রাজাকার অধ্যুষিত। আবার এই সুরখালী গ্রামেই ছিলেন আবদুল হামিদ সরদার নামক একজন বামপন্থী আন্দোলন কর্মী। বিস্ফোরক তৈরিতে তার বিশেষ দক্ষতা ছিল। খুলনায় অসহযোগ আন্দোলন ও পাকিস্তানি সেনাদের প্রাথমিক প্রতিরোধে যেসব বোমা ও বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছিল, তার অনেকগুলো এই হামিদ তৈরি করেছিলেন। স্বভাবতই তিনি ছিলেন স্থানীয় রাজাকারদের টার্গেট। কিন্তু অধিকাংশ সময় আত্মগোপনে থাকায় রাজাকাররা তার সন্ধান পেতো না।
১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল শবেবরাত। ঐ রাতে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করার জন্য হামিদ কিছুক্ষণের জন্য নিজের বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু এই খবরটি রাজাকাররা পেয়ে যাওয়ায় তারা বাড়ি ঘেরাও করে হামিদকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে তাঁকে সুরখালী তহসিল অফিসে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। এরপর রাজাকাররা সুরখালী-সহ পার্শ্ববর্তী কল্যাণশ্রী (ছত্রবিলা), খড়িয়াল ও গাওঘরা গ্রাম থেকে আরও বেশ কয়েকজনকে ধরে এই রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। রাত গভীর হলে রাজাকাররা এই বন্দীদের একটি অংশকে গজালিয়া গেটের পাশে নদীর চরে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় মধ্যরাতের দিকে তাঁদের গুলি করে নদীতে লাশ ফেলে দেয়। এই বন্দীদের মধ্যে কয়েকজনকে বারোআড়িয়া লঞ্চঘাট, সুরখালী লঞ্চঘাট এবং শরাফপুর খেয়াঘাটে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই গণহত্যার পরদিন বেশকিছু লাশ সুরখালী বাজারের কাছে ভাসতে দেখা যায়।২২৫ কিন্তু রাজাকারদের ভয়ে স্বজনেরা এই লাশ তুলে নিয়ে দাফনের সাহস পায়নি। নদীতেই তাঁদের সলিল সমাধি ঘটে।
গজালিয়া গেট গণহত্যার সাথে সুরখালীর স্থানীয় রাজাকাররাই জড়িত ছিল। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল কল্যাণশ্রী গ্রামের শহর আলী সরদার, মজিদ সরদার, জমির সরদার, মোজাহার, নওশের, সুফিয়ান, আশরাফ আলী, হাবিবুর রহমান, সুরখালী গ্রামের হাবিল শেখ, সুন্দরমহলের বশির শেখ রশিক গাজী, আতিয়ার রহমান, মতিয়ার রহমান, গাওঘরার আবদুল মজিদ, নাজিম শেখ, শাহজাহান আলী, আফসার আলী প্রমুখ। এই গণহত্যায় মারা যাওয়া মোট তেরোজনের নাম পরিচয় জানা গেছে।২২৬
……………………………………………………
২২৫. সাক্ষাৎকার, আবদুল মান্নান সরদার (সুরখালী, বটিয়াঘাটা), ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
২২৬. সাক্ষাৎকার, আবদুল মান্নান সরদার (সুরখালী, বটিয়াঘাটা), ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!