You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07 | বরুণা বাজার গণহত্যা (জুলাইয়ের শেষার্ধ ১৯৭১) | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

বরুণা বাজার গণহত্যা (জুলাইয়ের শেষার্ধ ১৯৭১)

বরুণাবাজার ডুমুরিয়া থানার ধামালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি গ্রাম্য ব্যবসায় ও শিক্ষা কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের জুন মাসে বরুণা বাজারে একটি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়। এই রাজাকাররাই বরুণা বাজার গণহত্যা ঘটায়।

গণহত্যার ঘটনা
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই বরুণা বাজারসহ সমগ্র ডুমুরিয়ায় গোপন কমিউনিস্ট আন্দোলনের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। সাধারণ্যে এই সন্ত্রাসবাদীরা নকশাল বলে পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর শেখ আবদুল মজিদ নামক স্থানীয় একজন বামপন্থী নেতার নেতৃত্বে নকশালরা ডুমুরিয়াতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। রাজাকারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযানে এই বাহিনী সফলও হয়। ফলে ডুমুরিয়াতে এরাই হয়ে দাঁড়ায় রাজাকারদের প্রধান শত্রু।
জুলাই মাসের শেষার্ধে বরুণা ও ধামালিয়া গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তিকে নকশালদের সহযোগী এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সন্দেহে রাজাকারা ধরে নিয়ে যায়। এরপর বরুণা বাজার স্কুল মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজাকাররা গুলি করে তাঁদের হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ হবার পরও খোকন মোল্লা নামক জনৈক ব্যক্তি জীবিত ছিল। বেঁচে থাকার আকুল আকাঙ্ক্ষায় রক্তাক্ত অবস্থায় সে পালানোর অন্তিম চেষ্টা করে। রাজাকাররা তা দেখতে পেয়ে খোকন মোল্লাকে আবার ধরে আনে। এই সময়ে পাশের রাস্তা দিয়ে কোদাল হাতে করে একজন কৃষক যাচ্ছিল। রাজাকাররা সেই কৃষকের কাছ থেকে কোদালটি কেড়ে নেয় এবং তা দিয়ে মুমূর্ষু খোকন মোল্লাকে কুপিয়ে হত্যা করে। স্থানীয় মতিন নামক একজন রাজাকার এই কোপানোর কাজটি করে।২০১
বহুলাংশে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নকশালরা বরুণা গ্রামের সা’জে গাজী এবং চা দোকানদার এলাহী বিশ্বাসকে হত্যা করে। হত্যা ও পাল্টা হত্যার ঘটনায় রাজাকাররা বরুণা বাজার এলাকায় বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ত্রাসের সঞ্চার করে। এরই এক পর্যায়ে তারা মোকছেদ মোল্লা নামক স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে বরুণা বাজার মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বেরোনোর সময় গুলি করে হত্যা করে।২০২
……………………………………………………
২০১. সাক্ষাৎকার, আবদুল মোতলেব সরদার, (অধ্যক্ষ, ভবদহ কলেজ) ও মো. আলতাফ হোসেন গাজী, ২৫ ডিসেম্বর ২০০৪। উল্লেখ্য, মতিন রাজাকার পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। তাকে বরুণা বাজার সংলগ্ন মাঠে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যাও করে। ধৃত অবস্থায় তাকে ওই মাঠে নিয়ে এলে সে বলে যে, একশ’ দশ জনকে সে নিজ হাতে খুন করেছে।
২০২. তদেব।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার