কাজদিয়া-তালতলা গণহত্যা (২১-২৮ জুলাই ১৯৭১)
কাজদিয়া গ্রামটি রূপসা উপজেলার টিএস বাহিরদিয়া২০৩ ইউনিয়নের একটি গ্রাম। খুলনা থেকে বাগেরহাটগামী সড়কের পাশে রূপসা উপজেলা সদরে এর অবস্থান।
গণহত্যার ঘটনা
১৯৭১ সালে টিএস বাহিরদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মুনসুরুল হক। রাজনৈতিকভাবে তিনি মুসলিম লীগের সমর্থক হলেও একাত্তরের পাকিস্তান সরকার ও সেনাদের কর্মকাণ্ড দেখে ঐ রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু কাজদিয়া এলাকাটি ছিল মুসলিম লীগ অধ্যুষিত; স্বাধীনতাবিরোধীরা এখানে খুব শক্তিশালী ও তৎপর ছিল। বাহিরদিয়া এবং পার্শ্ববর্তী ঘাটভোগ ইউনিয়নে রাজাকারদের অত্যাচার বৃদ্ধি পেলে বিশেষত স্থানীয় হিন্দুদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পেলে মুনসুরুল হক তাদের নিরাপত্তার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকেন। এর ফলে তিনি স্থানীয় রাজাকারদের রোষানলে পড়েন। ২১ জুলাই তারিখে স্থানীয় খোঁজাডাঙা রাজাকার ক্যাম্পের রাজাকাররা তার সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। রাজাকারদের অভিযোগ ছিল, কেন তিনি মুসলমান হয়ে পাকিস্তানের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে হিন্দুদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন। বাকবিতণ্ডার এ পর্যায়ে আকস্মিকভাবে একজন রাজাকার মুনসুরুল হককে গুলি করে। তাঁকে রক্ষা করার জন্য তার শ্যালক রশিদ খান এগিয়ে এলে রাজাকাররা তাঁকেও গুলি করে। ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু ঘটে।২০৪
চেয়ারম্যানকে হত্যা করতে পেরে রাজাকাররা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং ঐ দিনই হিন্দু অধ্যুষিত তালতলা গ্রামে হামলা করে অন্তত সাতজনকে হত্যা করে। এর ফলে ঐ দিনই তালতলা গ্রামের অধিবাসীরা রাতের আঁধারে ভারতের পথে রওনা হয়।
তালতলায় গণহত্যা ঘটিয়ে রাজাকাররা কাজদিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায় লুঠ করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনার এক সপ্তাহ পরে তারা আবার কাজদিয়া গ্রামে হামলা করে। তবে এবার শুধু লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে চলে না গিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করে ফেলে যায়।২০৫
এছাড়া ২৮ জুলাই তারিখে বাহিরদিয়া পোস্ট অফিসে মাসিক বেতন তুলতে আসা কয়েকজন শিক্ষককে খানসেনারা গুলি করে হত্যা করেছিল বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের নাম-পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
……………………………………………………
২০৩. পুরো নাম ‘তিলক স্বল্প বাহিরদিয়া’।
২০৪. সাক্ষাৎকার, খান শাহজাহান কবির (বাহিরদিয়া, রূপসা), ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৬।
২০৫. সাক্ষাৎকার, হাবিবুর রহমান (আলাইপুর, রূপসা), ২১ জানুয়ারি ২০০৬।
……………………………………………………
সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার