You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.29 | দৌলতপুর গণহত্যা (২৯ জুলাই ১৯৭১) | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

দৌলতপুর গণহত্যা (২৯ জুলাই ১৯৭১)

খুলনার সন্নিকটবর্তী দৌলতপুর একটি থানা সদর এবং বর্ধিষ্ণু শিল্পনগরী। এটিকে খুলনা মহানগরীর একটি উপশহর বললেও চলে। ১৯৭১ সালের জুন মাসের শেষার্ধে দৌলতপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী মহেশ্বরপাশায় রাজাকার ক্যাম্প গড়ে ওঠেছিল। এখানে অবস্থানরত রাজাকাররা প্রায়শই দৌলতপুর, পাবলা, দেয়ানা ও মহেশ্বরপাশাসহ আশেপাশের গ্রামসমূহে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতো। লুণ্ঠন ও ত্রাস সৃষ্টির এই অপকর্মে তারা পাকিস্তানি মিলিটারির সরাসরি সহায়তা নিতো।
১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই ছিল বৃষ্টিভেজা দিন। এই দিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে মিলিটারিরা দৌলতপুরের হাজী মহসিন স্কুলের শিক্ষক এস এম হানিফের বাড়ি ঘেরাও করে। এস এম হানিফ সেদিন সস্ত্রীক বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিলেন। মিলিটারিরা সম্ভবত তাঁদের পুত্র তৎকালীন খুলনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের বিশিষ্ট ছাত্রনেতা (দৌলতপুর বিএল কলেজের স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত) রওনাকুল ইসলাম বাবরকে পাকড়াও করতে গিয়েছিল। বাড়িতে মিলিটারির আগমন বুঝতে পেরে বাবর দ্রুত তাদের পারিবারিক গোরস্থানের ভিতর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। বৃষ্টিতে ভেজা ঈষৎ কর্দমাক্ত পথে দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ সে পা পিছলে পড়ে যায়। পিছনে ধাবমান রাজাকাররা তৎক্ষণাৎ তাকে ধরে ফেলে।২০৬ ইতোমধ্যে বাবরের ছোট ভাই এস এম জাকির হোসেনকেও পাকিস্তানি সেনারা বাড়ির ভেতর থেকে আটক করে। ধৃত এই দুই সহোদরকে মিলিটারিরা স্থানীয় রাজাকারদের হাতে সমর্পণ করে চলে যায়। রাজাকাররা এই দুইজনকে মহেশ্বরপাশা ক্যাম্পে নিয়ে তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার করে।
এস এম হানিফ বিভিন্নভাবে তাঁর দুই পুত্রকে উদ্ধারের চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কয়েকদিন পর মহেশ্বরপাশা প্রাইমারি স্কুলের পাশে এই দুইজনের ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।২০৭ জুলাই মাসের শেষার্ধে রাজাকাররা হরিপদ দাশ নামক দৌলতপুরের স্থানীয় একজন অধিবাসীকে নির্যাতন ও জখম করে হত্যা করে। দৌলতপুরের কলেজ রোডের সমর কুমার নামক অপর এক যুবককেও রাজাকাররা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছিল।২০৮
……………………………………………………
২০৬. রওনাকুল ইসলাম বাবর ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রপের খুলনা জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। সাক্ষাৎকার, বাবর আলী, ডিসেম্বর ২০০৪।
২০৭. তদেব।
২০৮. তদেব।
২০৯. সাক্ষাৎকার, ইদ্রিস গোলদার (চেঁচুড়ি, ডুমুরিয়া) ও কুদ্দুস গোলদার (চেঁচুড়ি, ডুমুরিয়া), ২১
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার