You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিলেমানপুর গণহত্যা (১৪ আগস্ট ১৯৭১)

শিলেমানপুর স্থানটি পাইকগাছা থানার গদাইপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে এখানে একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়।

গণহত্যার পটভূমি
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই খুলনা শহরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমান্তরালে পাইকগাছায় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ২৩ মার্চ এবং ২৬ মার্চ ১৯৭১ সেখানে সরকারি কর্মকর্তারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। এছাড়া গড়ইখালী রাজাকার ক্যাম্প এবং পাইকগাছা থানা দখল করে মুক্তিযোদ্ধারা বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। মুক্তিবাহিনীর এই ক্রমবর্ধমান শক্তি বিনাশ করবার জন্য পাকিস্তানি সেনারা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই মোতাবেক আগস্ট মাসের ১২ (অথবা ১৩) তারিখে প্রায় ষাট সদস্যের একটি সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী লঞ্চযোগে খুলনা থেকে পাইকগাছায় এসে পৌঁছায়।২১১
১৯৭০-এর নির্বাচনে পাইকগাছা থেকে জনাব এম এন এ গফুর আওয়ামী লীগ থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই এর সপক্ষে তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছিলেন। তার সহযোগী সংগঠক হিসেবে গদাইপুর ইউনিয়নের শেখ মাহতাব উদ্দিন মণি মিয়া, মো. রইজ উদ্দিন মিস্ত্রি এবং পাইকগাছার অত্যন্ত প্রভাবশালী গাজি শামসুর রহমান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ সক্রিয় ভূমিকা রাখছিলেন। রাজাকাররা পাইকগাছায় এসে ১৩ আগস্ট রাত্রে উক্ত তিনজনের বাড়িতে হানা দেয়। শেখ মাহতাব উদ্দিন মণি মিয়া এবং গাজি শামসুর রহমান রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। এ ছাড়া তৎকালীন খুলনা জেলা পরিষদের ওভারশিয়ারের ছেলে মিজানুর রহমান, মঠবাড়ি গ্রামের মনোহর বৈরাগী এবং নুনু বৈরাগী এবং মামুদকাটি গ্রামের মণি নাথকে একই রাতে রাজাকাররা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। নদীবহুল পাইকগাছায় চলাচলের জন্য বিশেষত রাত্রে নদী পারাপারের জন্য স্থানীয় একজন জেলের সহযোগিতা চেয়ে না পাওয়ায় রাজাকাররা তাকেও পাকড়াও করে।
এদের সকলকে হাত বেঁধে কপিলমুণি ক্যাম্পে নেওয়ার জন্য রাজাকাররা ওই রাত্রেই রওনা হয়। পথিমধ্যে রাত ভোর হয়ে যায়। রাজাকাররা আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে আগড়ঘাটার নিকটে শিলেমানপুরের চরে একে একে সকলকে গুলি করে হত্যা করে। শুধুমাত্র ধৃত জেলে হঠাৎ নদীতে লাফিয়ে পড়ে ডুব সাঁতার দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ধৃত মণি নাথকে অবশ্য আগেই হরিঢালী ইউনিয়নের সলুয়ার দাসপাড়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।২১২

……………………………………………………
২১১. সাক্ষাৎকার, বাবর আলী, ২ ডিসেম্বর ১৯৭১।
২১২. সাক্ষাৎকার, শিবনাথ মণ্ডল (হরিঢালী, পাইকগাছা) ও অনন্ত সরদার (হরিঢালী), ৬ মার্চ ২০০৫।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!