পারুলিয়া গণহত্যা (মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ ১৯৭১)
পারুলিয়া স্থানটি বর্তমানের সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার একটি ব্যবসায় কেন্দ্র। খুলনা-কালীগঞ্জ সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় এই বাজারের অবস্থান। বর্তমানে যেখানে পারুলিয়া ব্রিজটি রয়েছে, সেখানে এই গণহত্যাটি সংঘটিত হয়। উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা জেলায় এই গণহত্যাটি হলেও এখানে মারা যাওয়া প্রায় সকলেই ছিলেন খুলনা জেলার অধিবাসী।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ভারতমুখী যে শরণার্থী স্রোত শুরু হয়েছিল, মে মাসে এসে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। খুলনার বিভিন্ন নদ-নদী ও রাস্তায় তখন শরণার্থী প্রবাহ চলছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার দোসররা এই অসহায় মানুষদের শুধু ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেই ক্ষান্ত হয়নি. যাত্রাপথে নির্বিচারে হত্যা ও লুণ্ঠন করে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছিল। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলমান এই ভয়ার্ত মানুষগুলোর চলাচলের পথে হঠাৎ এসে হাজির হতো পাকিস্তানি মিলিটারিদের গাড়ি।
পারুলিয়া গণহত্যা হয়েছিল শরণার্থীদের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এমন একটি অতর্কিত আক্রমণে। পারুলিয়া থেকে মাত্র ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে ছিল ভারত সীমান্ত। শরণার্থীরা পায়ে হেঁটে সড়ক পথে যখন সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন পাকিস্তান সেনারা একটি গাড়িতে করে এসে তাদের উপর গুলি চালায়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসায় শরণার্থীদের অধিকাংশই ছিল ক্লান্ত; স্থানীয় পথঘাটও তাদের চেনা ছিল না। ফলে অতর্কিত এই আক্রমণে তারা দিশেহারা হয়ে যায়। প্রাণভয়ে তারা যে যেদিকে পারে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যে পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল, নিজের বাড়ি থেকে বহুদূরে এই অচেনা জায়গায় সেই পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতেই তাঁদের প্রাণ যায়। এই গণহত্যায় কতো মানুষ মারা পড়লো, কোথাকার মানুষ মারা পড়লো এই পরিসংখ্যান বের করা দুরূহ কাজ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য থেকে মনে হয়, এখানে প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জন মানুষ মারা গিয়েছিল।১২২
……………………………………………………
১২২. খুলনা শহরের হাজী মহসিন কলেজের শিক্ষক ভবসিন্ধু নারায়ণ সরদার সেদিন ওই শরণার্থীদের সাথে ছিলেন। গুলিতে তাঁর পরিবারের বেশ কয়েকজন মারা যায়। তাঁর দেয়া তথ্য থেকে মৃতের সংখ্যা অনুমান করা হয়েছে। এছাড়া দ্রষ্টব্য, গাউস মিয়া, খুলনা জেলা, পৃ. ৩২৩-২৪।
……………………………………………………
সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার