চালনা গণহত্যা (১৮ মে ১৯৭১)
মুক্তিযুদ্ধকালীন চালনা ছিল বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমুদ্র বন্দর। নাব্যতা কমে যাওয়ায় বর্তমানে এই বন্দরটি মংলায় স্থানান্তরিত হয়েছে। দাকোপ থানার অন্তর্গত এই স্থানটি একটি বর্ধিষ্ণু বাণিজ্য কেন্দ্র। খুলনা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে পসুর নদীর তীরে এর অবস্থান।
গণহত্যার ঘটনা
১৯৭১ সালে চালনা শরণার্থীদের ভারতে যাওয়ার একটি নৌ রুটে পরিণত হয়েছিল। পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা এবং খুলনার দাকোপ এলাকার শরণার্থীরা নৌকায় করে ভারতে যাওয়ার পথে আবশ্যকীয় প্রয়োজনে অথবা জোয়ার-ভাটার অনুকূল স্রোত পাবার জন্য এখানে মাঝে মাঝে অপেক্ষা করতো। চালনায় এ রকম একটি শরণার্থী-দলের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় গণহত্যা ঘটায়। উল্লেখ্য, বাজুয়া বাজারের লালু বেদে নামক জনৈক ব্যক্তি বাজুয়া গণহত্যার মতো চালনা গণহত্যাতেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছিল।
১৯ মে তারিখে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের একদল শরণার্থী নৌকাযোগে চালনায় এসে পৌঁছেছিল। ওইদিন বেলা এগারোটার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি লঞ্চে করে চালনা বাজারে পৌঁছায়। চালনার বটকৃষ্ণ সাহার ঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে তারা বাজারে প্রবেশ করে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা বাজার এবং শরণার্থীদের মধ্য থেকে দশ-বারো জনকে ধরে চালনা প্রাইমারি স্কুলের পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।১২৬
এরপর হানাদারদের এই দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি দল ‘বৌমার গাছতলা’, নামক পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে গিয়ে কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে গুলি চালায়। দলটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কালাচাঁদ ঢালীর বাড়ির সন্নিকটে বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে অগ্রসর হতে হতে পাকিস্তানি সেনারা চালনা বাজারের পাশে অবস্থিত খলিশা গ্রামে প্রবেশ করে একের পর এক বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। জ্বলন্ত এই অগ্নিকুণ্ডে ফেলে ওই গ্রামের কাঙাল নামক এক কিশোরকে হানাদাররা জীবন্ত পুড়িয়ে মারে।১২৭ চালনা গণহত্যায় স্থানীয় ও শরণার্থী মিলিয়ে পনেরো-ষোলো জনের মতো নিহত হন।১২৮
……………………………………………………
১২৬. গাউস মিয়া, খুলনা জেলা, পৃ. ৩২১।
১২৭. তদেব। সাক্ষাৎকার, অবিনাশ বিশ্বাস (চালনা), ৮ এপ্রিল ২০১৩।
১২৮. তদেব; স্বরোচিষ সরকার, একাত্তরে বাগেরহাট, পৃ. ২৪৯, ৩১১।
……………………………………………………
সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার