You dont have javascript enabled! Please enable it!

রানাই বকুলতলা গণহত্যা (১৮ মে ১৯৭১)

রানাই গ্রামটি ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। ১৮ মে তারিখে এই গ্রামের বকুলতলা নামক স্থানে একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন খর্নিয়া ইউনিয়ন ছিল রাজাকার অধ্যুষিত একটি এলাকা। এই ইউনিয়নের রানাই, আঙ্গারদহ, খর্নিয়া প্রভৃতি গ্রামে রাজাকারদের ব্যাপক আধিপত্য ছিল। পাশ্ববর্তী শোভনা গ্রামেও এই রাজাকারদের কিছু সহযোগী ছিল। শোভনা পশ্চিম পাড়ার জনৈক ফকরউদ্দিন সরদার ছিলেন এমন একজন সহযোগী। তিনি শোভনা ও পার্শ্ববর্তী খর্নিয়া গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এগারো জন ব্যক্তিকে এই আশ্বাস দেন যে, রাজাকারদের কাছে গিয়ে অধীনতা স্বীকার করলে তারা নিরাপদে গ্রামে থাকতে পারবেন। সেই মোতাবেক ঐ এগারো জন রানাই গ্রামের রাজাকারদের সাথে দেখা করতে সম্মত হয়। ১৮ মে তারিখে তারা রানাই রওনা হয়। তবে সেদিন তারা লক্ষ করেন যে, রাজাকারদের একটি সংঘবদ্ধ দল তাদের নিতে উপস্থিত হয়েছে। রাজাকাররা একপর্যায়ে তাঁদের পাহারা দিয়ে রানাই গ্রামের বকুলতলায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে হঠাৎ রাজাকাররা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। আটককৃতদের উপরে তারা শুরু করে উপর্যুপরি নির্যাতন। আটককৃতদের মধ্যে সাত জনকে খুলনার গল্লামারী রেডিও সেন্টারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য তাঁদের পাকিস্তানি সেনাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এই সাতজন অবশ্য আর ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয়, পাকিস্তানি সেনারা গল্লামারী বধ্যভূমিতে তাঁদের হত্যা করেছিল।১২৯
রানাই গ্রামের বকুলতলায় ঐ দিন রাজাকাররা আটজনকে গুলি করে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শোভনা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার নওয়াব আলী তরফদার প্রাণে বেঁচে যান। লিয়াকত আলী গাজী নামক স্থানীয় পাঁচপোতা গ্রামের একজন যুবকও সেদিন এই গণহত্যা থেকে প্রাণে বেঁচে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।১৩০ রানাই বকুলতলা গণহত্যায় খর্নিয়া গ্রামের সামছুর রহমান গাজী, জাহান আলী বিশ্বাস, আবদুল করিম শেখ, রানাই গ্রামের রওশন আলী গাজী, আবু বক্কর সরদার, শাহজাহান আলী সরদার, সোহরাব হোসেন সরদার ও নাজের আলী ফকির এই গণহত্যায় জড়িত ছিল বলে জানা যায়।১৩১
……………………………………………………
১২৯. সাক্ষাৎকার, শেখ আমজাদ হোসেন (চিংড়া, ডুমুরিয়া), ৩০ এপ্রিল ২০১৫।
১৩০. দৈনিক পূর্বাঞ্চল, ২২ এপ্রিল ২০১৭। গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া যুবক লিয়াকত আলী গাজী ২০১৬ সালে উক্ত রাজাকারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
১৩১. দৈনিক পূর্বাঞ্চল, ২২ এপ্রিল ২০১৭। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে উক্ত অভিযুক্তদের বিচার কার্য চলছে (২০১৮)।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!