You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.27 | শিরোমণি গণহত্যা (মে থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১) | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোমণি গণহত্যা (মে থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১)

শিরোমণি স্থানটি খুলনা শহর থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার উত্তরে খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মে মাসের শেষ দিকে এখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়।
শিরোমণি গণহত্যার কারণ হিসেবে দুটি বিষয়কে সনাক্ত করা যায়। এক. মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা মূলত গেরিলা কৌশল ব্যবহার করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সন্ত্রস্ত রাখতো। এই কৌশলের একটি ছিল ছদ্মবেশ ধারণ। পাকিস্তানি সেনাদের গোপন খবর বা অবস্থান জানার জন্য অথবা অস্ত্রশস্ত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা কৃষক, জেলে, মজুর, ফেরিওয়ালা, মাঝি প্রভৃতি বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করতো। শিরোমণি গণহত্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছিল, তারা সবাই ছিল পান চাষি—পানের বোঝা মাথায় করে তারা হাটে যাচ্ছিল। ফলে এই পান চাষিদেরকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গেরিলা হিসেবে সন্দেহ করে থাকতে পারে।
দ্বিতীয় কারণটি ছিল সাম্প্রদায়িক। মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের সহযোগীরা হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর যে স্বতন্ত্র মাত্রার হত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছিল, শিরোমণির গণহত্যা ছিল তার একটি নজির। প্রতিদিনের মতো পান বিক্রি করার জন্য ‘বারুই’১৮১ সম্প্রদায়ের চৌদ্দ-পনেরোজন ব্যক্তি হাটে যাবার পথে এই গণহত্যার শিকার হয়। জানা যায়, স্থানীয় শান্তি কমিটি’র কতিপয় সদস্য পাকিস্তানি সেনাদের বুঝিয়েছিল যে, বোঝা মাথায় হাটে যাওয়া লোকগুলো হিন্দু – অতএব, তারা পাকিস্তানের শত্রু।১৮২ ফলে পাকিস্তানি সেনারা তাদেরকে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে ফেলে। এখানে অন্তত তেরো জন মারা যায় বলে জানা গেছে। এছাড়া দুই-তিনজন গুরুতর আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে যায়।১৮৩
২৭ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে শিরোমণিতে রাজাকাররা আরও একটি গণহত্যা ঘটিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সাহায্য করার দায়ে রাজাকাররা শিরোমণি গ্রামের শেখ মাহতাব উদ্দিন, শেখ ইন্তাজ আলী এবং মাত্তুডাঙার আকু হালদারকে আটক করে। এরপর তাদেরকে নির্মম শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করে।১৮৪
এছাড়া ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ শিরোমণিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর মধ্যে যে ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাতে শিরোমণি গ্রামের উত্তর পাড়ার শেখ ওসমান গনি, শেখ সেকেন্দার আলী, আতিয়ার শেখ, মজিদ শেখ, জলিল শেখ, মোত্তালেব শেখসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হয়।১৮৫
……………………………………………………
১৮১. পান চাষিদের যশোর-খুলনা এলাকায় ‘বারুই’ বলা হয়। এটি ‘বারুজীবী’ শব্দের সংক্ষেপ।
১৮২. বাবর আলী, দুর্জয় অভিযান, পৃ. ৮১।
১৮৩. বাবর আলী, দুর্জয় অভিযান, পৃ. ৮১।
১৮৪. তদেব।
১৮৫. তদেব।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার