You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.06 | সাজিয়াড়া গণহত্যা (জুন থেকে অক্টোবর ১৯৭১) | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

সাজিয়াড়া গণহত্যা (জুন থেকে অক্টোবর ১৯৭১)

সাজিয়াড়া গ্রামটির একাংশ বর্তমানে ডুমুরিয়া সদরে রূপান্তরিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ডুমুরিয়া ও সাজিয়াড়া মূলত পরস্পর সংলগ্ন দুইটি গ্রাম ছিল। ১৯৭১ সালে সাজিয়াড়া ও ডুমুরিয়ায় বেশকিছু রাজাকার ছিল। খুলনা শহরে বাংলাদেশের প্রথম যে রাজাকার ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী যুবকদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। এই প্রশিক্ষণের প্রথম ব্যাচে ডুমুরিয়া ও সাজিয়াড়ার কয়েকজন যুবক প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।১৮৬
রাজাকার প্রশিক্ষণ শেষে অস্ত্র নিয়ে এলাকায় এসে এরা স্থানীয় মানুষের উপর ধারাবাহিক গণহত্যা ও নির্যাতন চালানো শুরু করে। প্রায়ই তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন অথবা হিন্দুদের ধরে নিয়ে প্রতিহিংসাবশত হত্যা করতো। এভাবে জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এখানকার রাজাকাররা সাজিয়াড়া ও ডুমুরিয়া গ্রামের বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। এর মধ্যে অন্যতম তৎকালীন খুলনা মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ জোবায়েদ আলী। অত্যন্ত সজ্জন ও শিক্ষানুরাগী এই মানুষটিকে স্থানীয় রাজাকাররা ৬ জুলাই প্রকাশ্য দিবালোকে ডুমুরিয়া বাজারে গুলি করে হত্যা করে। ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়নের লোহাইডাঙা গ্রামের প্রভাত বিশ্বাসকেও এই রাজাকাররা নির্মমভাবে হত্যা করে। ডুমুরিয়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে রাজাকাররা প্রথমে তাঁকে নির্যাতন করে। পরে তাঁকে জীবন্ত বস্তায় ভরে ডুমুরিয়া বাজারের তৎকালীন কাঠের ব্রিজ থেকে (বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কিছুটা উত্তর দিকে রাস্তার কালভার্টের কাছে) নিচে নদীতে ফেলে দেয়। এই ব্রিজের অনতিদূরে নদীতে তখন খেয়া মাঝির কাজ করতেন জনৈক কালীপদ বিশ্বাস। স্থানীয় রাজাকাররা একদিন তাঁকে প্রকাশ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এভাবে রাজাকারদের হাতে সাজিয়াড়া ও ডুমুরিয়ায় বেশকিছু মানুষ নিহত হন। রাজাকারদের হাতে ডুমুরিয়ায় বিভিন্ন সময়ে খুন হওয়া চৌদ্দ জনের নাম জানা গেছে।১৮৭
……………………………………………………
১৮৬. এর মধ্যে তৎকালীন ডুমুরিয়া থানার মুসলিম লীগের সভাপতির কয়েকজন নিকট আত্মীয় ছিল। সাক্ষাৎকার, শেখ আমজাদ হোসেন (ডুমুরিয়া সদর), ৩০ এপ্রিল ২০১৫।
১৮৭. সাক্ষাৎকার, অধীর কবিরাজ (গুটুদিয়া, ডুমুরিয়া), ২৬ জানুয়ারি ২০০৫। ডা. সুভাষ চন্দ্ৰ বিশ্বাস (সাজিয়াড়া, ডুমুরিয়া), সাক্ষাৎকার, মোস্তফা খালিদ খসরু (শেখ জোবায়েদ আলীর ছেলে, ডুমুরিয়া), ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার