You dont have javascript enabled! Please enable it!

অজোগড়া গণহত্যা 

অজোগড়া তেরখাদা উপজেলার একটি ইউনিয়ন। অজোগড়া গ্রামের নামেই এই ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে। গ্রামটি খুলনা শহর থেকে দশ-বারো কিলোমিটার উত্তরে তেরখাদা ও রূপসা থানার সীমান্তের নিকটে অবস্থিত। অজোগড়া গ্রামের রয়েছে তিনটি অংশ বা পাড়া: বিপ্র অজোগড়া, রোস্তম অজোগড়া এবং বৃহ অজোগড়া। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল (১৪ বৈশাখ ১৩৭৮) এই গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়।

গণহত্যার ঘটনা
২৯ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রায় শ’খানেক পাকিস্তানি সেনা অজোগড়ার পালের হাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী রথখোলার মাঠে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় জুম্মন নামক স্থানীয় এক দুর্বৃত্তকে মিলিটারিদের সাথে দেখা যায়। শান্তি কমিটির কিছু সদস্যও সেখানে উপস্থিত ছিল। এদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে এলাকার অধিবাসীরা ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পিনাকপাণি ঘোষাল ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই খানসেনারা বিপ্র অজোগড়ায় প্রবেশ করে হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে থাকে। স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দুর্বৃত্তরা এ সময় লুঠপাট শুরু করে। বাড়িতে অবস্থানকারী বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলাদের তারা নিষ্ঠুরভাবে মারপিট ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। সাথে সাথে পলায়নপর মানুষকে তারা গুলি করে হত্যা করতে থাকে।৬৯ বিপ্র অজোগড়ার পর পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা রোস্তম অজোগড়া এবং তারপর বৃহ অজোগড়ায় গণহত্যা চালায়। বৃহ অজোগড়ায় তারা অন্তত বারোজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে।৭০ এই গণহত্যার পর থেকে ডিসেম্বর মাসে বিজয়ের আগ পর্যন্ত অজোগড়া গ্রামের হিন্দুদের বাড়িগুলো ছিল কার্যত জনশূন্য। গণহত্যা সংঘটনের পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যেই বাড়িগুলো সম্পূর্ণ লুণ্ঠিত হয়ে শ্মশানের নৈঃশব্দ নিয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। এই গণহত্যায় প্রায় বিশ জনের মতো মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্তত তিনজন ছিল শিশু এবং দুইজন মহিলা৷৭১
……………………………………………………
৬৯. সাক্ষাৎকার, পিনাকপাণি ঘোষাল (অজোগড়া, তেরখাদা), ২৭ ডিসেম্বর ২০০৪।
৭০. সাক্ষাৎকার, পিনাকপাণি ঘোষাল (অজোগড়া, তেরখাদা), ২৭ ডিসেম্বর ২০০৪। এখানে মারা যাওয়া অনেকের পরিবার পরবর্তীকালে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ায় নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
৭১. বাবর আলী, দুর্জয় অভিযান, পৃ. ৫৫। সরজমিন অনুসন্ধান, ২৮ ডিসেম্বর ২০০৪।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!