You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.01 | সেনের বাজার গণহত্যা  | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

সেনের বাজার গণহত্যা 

খুলনা শহরের জেলখানা ঘাটের কাছ থেকে ভৈরব নদ পাড়ি দিলে অপর পারেই সেনের বাজার। ১৯৭১ সালের ১ মে এখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়। সমসাময়িক অন্যান্য গণহত্যার সাথে এই গণহত্যার প্রেক্ষিতের যথেষ্ট মিল রয়েছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে খুলনা শহরের সার্কিট হাউজ মাঠে সার্বক্ষণিকভাবে পাকিস্তানি মিলিটারিদের ক্যাম্প চালু ছিল। সেনের বাজার এলাকাটি যদিও রূপসা থানার মধ্যে অবস্থিত, সার্কিট হাউজের এই ক্যাম্প থেকে তা এক কিলোমিটার মতো দূরত্বে ছিল। ফলে শান্তি কমিটির অথবা স্থানীয় কোনো স্বাধীনতা বিরোধীর পক্ষে সেনাবাহিনীকে খবর দিয়ে সেখানে নিয়ে গণহত্যায় প্ররোচিত করা সহজতর ছিল। জানা যায়, শেখ জামাল নামক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন স্থানীয় সহযোগী সেনের বাজারে মিলিটারি নিয়ে গিয়েছিল।৯৬

গণহত্যার ঘটনা
১ মে ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল খুলনা শহরের জেলখানার সন্নিকটবর্তী খেয়াঘাট পার হয়ে সেনের বাজারে প্রবেশ করে। স্থানীয় শান্তি কমিটির কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তারা প্রথমে শ্যামাপদ সিংহের বাড়ি প্রবেশ করে। সেখানে তারা শ্যামাপদ সিংহকে না পেয়ে আক্রোশবশত তাঁর বাড়িতে লুঠপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। এরপর তারা সেনের বাজারের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি অমূল্যধন সিংহের বাড়িতে হানা দেয়। অমূল্যধন সিংহ ছিলেন অসাধারণ বিদ্যানুরাগী। তাঁর বাড়িতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পারিবারিক লাইব্রেরি ছিল। পাকিস্তানি মিলিটারি অমূল্যধনকে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ির পোষা দুটি অ্যালসেসিয়ান কুকুরকে গুলি করে মারে। এরপর স্থানীয় শান্তি কমিটির লোকজনকে বাড়ির মূল্যবান আসবাব, তৈজসপত্র, অলঙ্কার এবং বইপত্র ধ্বংস ও লুঠপাট করতে প্ররোচিত করে। ঐ দিনই এই লুটেরারা তাঁর লাইব্রেরির বইপত্র তছনছ করে ধ্বংস করে দেয়। এরপর মিলিটারি সেনের বাজারের অপর এক অবস্থাপন্ন ব্যক্তি যজ্ঞেশ্বর দে’র বাড়ি প্রবেশ করে। যজ্ঞেশ্বর দে ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, পাকিস্তানি সেনারা যজ্ঞেশ্বর দে’র কাছে সোনাদানা ও টাকাপয়সা দাবি করায় তিনি তাদের বেশ কিছু সোনা ও টাকা দেন। এগুলো হাতিয়ে নেওয়ার পর তারা তাঁর ছেলে দিগ্‌ভূষণ কোথায় জানতে চায়। যজ্ঞেশ্বর দে জানান যে এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানি মিলিটারি তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর স্থানীয় শান্তি কমিটির দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ব্যাপক লুঠতরাজ চালায় এবং যাবার সময় বাড়ির সাতখানা ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যায়।৯৭
……………………………………………………
৯৬. সাক্ষাৎকার, মো. লুৎফর রহমান ও মোল্লা আব্দুল হান্নান (সেনের বাজার, রূপসা), ২৬ জানুয়ারি ২০০৫।
৯৭. সাক্ষাৎকার, লুৎফর রহমান, ২৬ জানুয়ারি ২০০৫। এ ছাড়া ওই দিন অজ্ঞাপরিচয় আরো একজন সেনের বাজারে মারা পড়েছিল বলে কেউ কেউ সরজমিন অনুসন্ধানের সময় উল্লেখ করেছেন।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার