You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04 | রেল স্টেশন গণহত্যা (এপ্রিল-ডিসেম্বর ১৯৭১) | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

রেল স্টেশন গণহত্যা (এপ্রিল-ডিসেম্বর ১৯৭১)

খুলনা শহরের একটি উল্লেখযোগ্য বধ্যভূমি হলো খুলনা রেল স্টেশন ও সংলগ্ন রেল লাইনের বিস্তীর্ণ এলাকা। এখানে এপ্রিল ও মে মাসব্যাপী ব্যাপক গণহত্যা সংঘটিত হয়। তৎকালীন খুলনা রেল কলোনিতে মূলত বিহারিদের প্রাধান্য ছিল। এখানকার গণহত্যার মূল হোতা ছিল এই বিহারি এবং তাদের সহযোগী দুর্বৃত্তরা।৭৩ ট্রেন যাত্রীরা ছিল এখানকার গণহত্যার প্রধান শিকার। স্টেশনে বা তার আশেপাশে মানুষজনকে আটক করে দুর্বত্তরা প্রথমে তাদের সর্বস্ব লুঠ করতো। পরে তাদের মধ্য থেকে যুবকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে পেট চিরে পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদে ফেলে দেওয়া হতো।
সাধারণ যাত্রী ছাড়াও রেল ও স্টিমার ঘাটের অনেক মুটেও এখানে গণহত্যার শিকার হয়। রাতের বেলায় রেল কলোনিতে বাঙালিরা গেলে প্রায়ই আক্রান্ত হতো। কলোনির বসবাসরত বাঙালি রেল কর্মচারীরাও এই নৃশংসতার শিকার হয়েছিল। গণহত্যার প্রথমদিকে লাশ পুঁতে রাখা হলেও পরবর্তীকালে রাতে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো। খুলনা রেল স্টেশন এলাকায় আশিয়ানি হোটেলের সামনে অবস্থিত একটি বিরাট ডোবায় বহু বাঙালির মৃতদেহ ফেলে দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পর এখানে পড়ে থাকা অনেক গলিত মৃতদেহের মধ্যে তৎকালীন খুলনা থানার দারোগা জনাব আবুল কাশেমের মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। ডিউটি করে ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।৭৪
এপ্রিল ও মে মাসের পর এখানকার গণহত্যার প্রাবল্য কমে গেলেও নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে তা আবার বৃদ্ধি পেয়েছিল। রেল স্টেশন রোডে তখন কেরোসিন বিক্রি হতো। কেরোসিনের সংকটের কারণে গ্রাম থেকে আসা ক্রেতারা এখানে লাইন দিয়ে কেরোসিন কিনতো। ডিসেম্বর মাসে খুলনায় বিমান যুদ্ধ শুরু হলে কেরোসিন কিনতে আসা লোকজন দৌড়ে কলোনি এবং আশেপাশে আশ্রয় নিতো। ওই সময়ে তাদের টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে হত্যা করে রেল রোডের একটি গুদামে রাখা হতো। স্বাধীনতার পর এই গুদাম এবং আশিয়ানি হোটেলের সামনের ডোবা থেকে শতাধিক মৃত মানুষের গলিত লাশ পাওয়া গিয়েছিল।৭৫
……………………………………………………
৭৩. হাসান হাফিজুর রহমান, দলিলপত্র, ৮ম খণ্ড, ৫৪৪–৪৫।
৭৪. হাসান হাফিজুর রহমান, দলিলপত্র, ৮ম খণ্ড, ৫৪-৪৫।
৭৫. হাসান হাফিজুর রহমান, দলিলপত্র, ৮ম খণ্ড, ৫৪৪-৪৫।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার