সাউথ সেন্ট্রাল রোড গণহত্যা (১৭ মার্চ ১৯৭১)
মার্চের প্রথম দিকে খুলনাতে রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের নামে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল। কিছুদিন পর শহরের সাধারণ ও অরাজনৈতিক অধিবাসীরাও গণহত্যার শিকার হতে থাকে। খুলনা শহরে প্রথম এই জাতীয় গণহত্যার শিকার হন সাউথ সেন্ট্রাল রোডের নীলিমা রানি দাসের পরিবার।৩৭ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সংবাদ জানার জন্য তখন খুলনার অধিবাসীরা প্রধানত আকাশবাণী এবং বিবিসি-র খবর শুনতো। নীলিমা রানি দাসের পরিবারও রাত সাড়ে দশটায় আকাশ বাণীর খবর শুনছিল। ১৭ মার্চ ১৯৭১ (৩ চৈত্র ১৩৭৮ বাং) তারিখের ঘটনা এটি। বাড়িতে প্রবেশ করে ছয়জন পাকিস্তানি সেনা। নীলিমার স্বামীকে তারা খোঁজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁর স্বামীকে তারা আটক করে। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য নীলিমা বাড়িতে থাকা টাকা-পয়সা এবং গহনা পাকিস্তানি সেনাদের দিয়ে কাতর অনুরোধ জানাতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা তার দেওয়া টাকা-পয়সা ও অলঙ্কারাদি গ্রহণ করে। কিন্তু যাবার সময়ে নীলিমার স্বামীকেও ধরে নিয়ে যায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় নীলিমার পরিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে গুলির শব্দ শুনতে পায়। আলতাফ গলির মোড়ে ঐদিন নীলিমার স্বামীসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত অন্য পাঁচ জনের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। চিত্তরঞ্জন ও রবি নামে দুইজন এদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যায়। স্বামীকে হারিয়ে নীলিমা তার চার মাস বয়সের শিশু সন্তান নিয়ে প্রথমে গ্রামের বাড়ি ও পরে ভারতে চলে যান।৩৮
……………………………………………………
৩৭. হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পা.), বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধঃ দলিলপত্র, ৮ম খণ্ড (ঢাকা: তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, ১৯৮৪), পৃ. ২১৫।
৩৮. হাসান হাফিজুর রহমান, দলিলপত্র, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২২৫।
……………………………………………………
সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার