নিউজপ্রিন্ট মিল গণহত্যা (২৭ মার্চ ১৯৭১)
নিউজপ্রিন্ট মিলটির অবস্থান খুলনা শহরের খালিশপুর শিল্প এলাকায়। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা দেখেছি যে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি সেনারা খুলনায় প্রবেশের চেষ্টা করলে বিভিন্ন স্থানে তারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। এই কারণে তারা সবসময় সরাসরি মূল রাস্তা দিয়ে না গিয়ে পার্শ্বরাস্তা ব্যবহার করতো। ২৭ মার্চ তারিখে পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল দৌলতপুর থেকে খুলনায় যাওয়ার প্রধান সড়কটি ব্যবহার না করে খালিশপুরের ভিতর দিয়ে মূল শহরে প্রবেশের চেষ্টা করে। খালিশপুরের এই রাস্তাটির পাশেই ছিল খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। পাকিস্তানি সেনারা এই মিলের কাছে এলে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মিলের শ্রমিক ও স্থানীয় জনতা মিলিতভাবে এই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু এতে পাকিস্তানি সেনাদের বেশিক্ষণ আটকে রাখা সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তানি সেনারা এক পর্যায়ে নিউজপ্রিন্ট মিলে প্রবেশ করে শ্রমিকদের মধ্যে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এর ফলে সেখানে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে প্রায় ত্রিশজন মতো মারা পড়ে। খুলনার নিউজপ্রিন্ট মিলে এঁদের একটি গণকবর রয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা ঐ দিন কাজী আবদুল মতিন নামক একজনকে নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে আটক করে সার্কিট হাউজে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাঁকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, সেখানে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।৩৯
……………………………………………………
৩৯. সাক্ষাৎকার, কাজী কামাল হোসেন (কাজী আবদুল মতিনের পুত্র, খালিশপুর), ২৮ জুন ২০০৭।
……………………………………………………
সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার