You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.15 | রংপুর গণহত্যা | খুলনা - সংগ্রামের নোটবুক

রংপুর গণহত্যা (১৫ এপ্রিল ১৯৭১)

রংপুর হলো ডুমুরিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন। ডুমুরিয়ার উত্তরাংশে ফুলতলা উপজেলার সীমানা ঘেঁষে এই ইউনিয়নটি অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিনে এই ইউনিয়নের রংপুর গ্রামে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এক নৃশংস গণহত্যা চালায়।

গণহত্যার পটভূমি
রংপুর গ্রামে সংঘটিত গণহত্যার একক কোনো প্রত্যক্ষ কারণ জানা যায় না। তবে সরজমিন অনুসন্ধানে এই গণহত্যার প্রেক্ষিত সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শুরু থেকে এই এলাকায় চুরি-ডাকাতির প্রকোপ বেড়ে গিয়েছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রংপুর গ্রামটি ছিল সম্পূর্ণ হিন্দু অধ্যুষিত। পার্শ্ববর্তী বেশকিছু গ্রামও ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ রকম একটি গ্রাম হলো বসেরাবাদ। অবস্থানগত দিক দিয়ে বসেরাবাদ গ্রামটি রংপুর গ্রামের সন্নিকটবর্তী এবং ফুলতলা উপজেলা সীমানার ঠিক পাশে অবস্থিত। এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে ফুলতলা উপজেলার কতিপয় দুর্বৃত্ত বসেরাবাদ গ্রামে এসে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছিল। ১০ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে বন্দুক ও বোমার ভয় দেখিয়ে এই দুর্বৃত্তরা বসেরাবাদ গ্রামের কয়েকটি বাড়ি দখল করে নেয়। এই দখলদারদের মূল হোতা ছিল লখাই নামক ফুলতলার একজন ডাকাত। ক্রমবর্ধমান লুণ্ঠন ও চুরি-ডাকাতির কারণে এলাকার অধিবাসীরা বন্দুক, দা, লাঠি, সড়কি ইত্যাদি জোগাড় করে গ্রাম পাহারার ব্যবস্থা করেছিল। একপর্যায়ে বসেরাবাদের কয়েকটি বাড়ি বেদখল হয়ে গেলে এই সব পাহারারত লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে দখলদার দুর্বৃত্তদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়ে লখাই ডাকাত-সহ চার-পাঁচজনকে ধরে ফেলে। পরে গণপিটুনিতে তারা মারা যায়। এই প্রতিরোধে রংপুর গ্রামের উত্তরাংশের কিছু অধিবাসী অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।৫৫ যদিও রংপুর গণহত্যা হয়েছিল রংপুরের দক্ষিণাংশে কালীতলা এলাকায়, যেখানকার অধিবাসীরা বসেরাবাদের প্রতিরোধে অংশ নেয়নি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে খুলনার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে লুঠতরাজ, হুমকি প্রভৃতি প্রাত্যহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। বিশেষত স্বাধীনতা-বিরোধী অবাঙালি বিহারিরা এক্ষেত্রে ছিল অগ্রণী। বসেরাবাদের মতো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় এই জাতীয় সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের ঘটনার কারণে বিহারিরা প্রতিহিংসা-পরায়ণ হয়ে উঠেছিল। এছাড়া বসেরাবাদে মারা যাওয়া লখাই ডাকাত ছিল ফুলতলার দামোদরের স্বাধীনতা-বিরোধী সরোয়ার মোল্লার অন্যতম সহযোগী। ধারণা করা হয়, এই গণহত্যায় সরোয়ার মোল্লার হাত ছিল।
রংপুর গণহত্যার পিছনে তৎকালীন খুলনার প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের সহযোগিতাও ছিল। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণার জন্য তিনি রংপুর গ্রামে একটি নির্বাচনী সভা করেছিলেন। সভায় ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছিল; কিন্তু ভোটের পরে দেখা গেল তিনি রংপুর কেন্দ্রে মাত্র দুইটি ভোট পেয়েছেন। বাকি সব ভোট পান আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাউদ্দিন ইউসুফ। ফলে খান এ সবুর এই এলাকার উপর বিশেষত এলাকার পুরোধা ব্যক্তিত্ব প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাসের উপর ছিলেন ক্ষুব্ধ। তিনি এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রংপুরে গণহত্যা ঘটিয়েছিলেন বলেও স্থানীয় অনেকে মনে করেন। এই গণহত্যায় ডুমুরিয়া ইউনিয়নের তৎকালীন চৌকিদার খোদা বখশ্ ও ফুল শেখ পাকিস্তানি সেনাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছিল।

গণহত্যার বিবরণ
রংপুর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে। ঐ দিন সকাল নয়টার দিকে দুইটি গাড়িতে চেপে পাকিস্তানি মিলিটারি রংপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী শলুয়া বাজারের কাছে এসে নামে। এরপর শলুয়া থেকে আনুমানিক ২০ জন পাকিস্তানি সেনা উত্তর দিকে বিলের ভিতর দিয়ে পায়ে হেঁটে রংপুর গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশের আগে মিলিটারিরা বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। চার- পাঁচ জনের এক একটি গ্রুপ আলাদা আলাদাভাবে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে হামলে পড়ে। একটি গ্রুপ গ্রামে প্রবেশের মুখে ভোন্ডল মণ্ডল নামক একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে গুলি করে হত্যা করে। ভোন্ডল এই সময়ে রাস্তার উপরে বসে একটি দা দিয়ে বাঁশের চটা তৈরি করছিল। অন্য একটি গ্রুপ রংপুর কালীবাটী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাসকে খোঁজ করতে থাকে। উল্লেখ্য, প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস ছিলেন এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। ১৯৩৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএ এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি পাশ করেন। ১৯৪৩-৫৩ সময়কালে তিনি রংপুর ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া ১৯৪৯ সালে তিনি ‘পূর্ববঙ্গ তফসিলি জাতি ফেডারেশান’-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলে পুলিশ কর্মকর্তার চাকরি পেয়েও তিনি তা না করে নিজ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতায় আত্মনিবেদন করেছিলেন।৫৬
প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস ঐ দিন সকালে নিজ বাড়িতেই ছিলেন। মিলিটারি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছে বুঝতে পেরে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পরিচয় দেন এবং তাদের বসতে বলেন। তিনি ভালো ইংরেজি বলতে পারতেন এবং ইংরেজিতে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে কথা বলছিলেন। পাকসেনাদের তিনি এই বলে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, রংপুরের অধিবাসীরা সবাই শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষ। শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো তৎপরতার সাথে এখানকার কেউ জড়িত নন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা তাঁর কথায় কর্ণপাত করছে না দেখে এক পর্যায়ে তিনি সেখান থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে পার্শ্ববর্তী খালের পাশে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর নির্মমভাবে তাঁর উপর বেয়নেট চার্জ করতে থাকে। পাকিস্তানি সেনাদের উপর্যুপরি এই বেয়নেট চার্জে প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস সেখানেই প্রাণ হারান।
প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাসকে হত্যা করার পর পাকিস্তানি সেনাদের এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী ইন্দুভূষণ বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা চালায়। ইন্দুভূষণ ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর। তাঁর স্ত্রী ঊর্মিলা বিশ্বাস তখন সকালের পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেদিন ছিল বাংলা নববর্ষ। প্রথাগতভাবে রংপুর এলাকার হিন্দুরা পয়লা বৈশাখে ‘ভগবতী পূজা’ করে থাকেন। এই দিন সকালে হিন্দু গৃহবধুরা প্রাতঃস্নান করে গোয়ালে দুধের পায়েস রান্না করে ভগবতী দেবীকে (স্রষ্টাকে মাতৃরূপে অর্চনা) নিবেদন করেন। গরু-মহিষাদি স্নান করানো হয়—–পুষ্পমাল্যে ভূষিতও করা হয় কখনওবা। এছাড়া প্রার্থনা, উপবাস, ধর্মগ্রন্থপাঠ, ধর্মসঙ্গীত শ্রবণ প্রভৃতি উপাচারের মাধ্যমে দিনটি বর্তমান সময়েও পালিত হয়।
উর্মিলা বিশ্বাসও ঐ দিন ভগবতী পূজার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুরু হওয়ায় তিনি হতচকিত হয়ে যান। তিনি দেখেন, চিৎকার করতে করতে লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পাশ্ববর্তী প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাসের বাড়িতে মিলিটারি প্রবেশ করলে তিনি আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে তিনি তাঁর স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে ঘরের মধ্যে আশ্রয় নেন। তাঁদের বসতবাড়িটি ছিল পাকা দালান, এজন্য প্রতিবেশী অনেকেও দৌড়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যখন তাঁরা ঘরে দরজা দিয়ে ভিতরে বসে আছেন, তখন বাইরে গুলি ও মানুষের ছোটাছুটি ও চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলেন। সহসা তাঁদের ঘরের দরজায় লাথি মারার শব্দ হতে থাকে। বোঝা যায় যে, বাইরে অস্ত্র হাতে মিলিটারি অপেক্ষা করছে। ঘরের মধ্যে থাকা মহিলা ও শিশুদের পিছনের একটি দরজা দিয়ে দ্রুত বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে পাকিস্তানি সেনারা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে এবং অস্ত্রের মুখে উর্মিলা বিশ্বাসের স্বামী ইন্দুভূষণ বিশ্বাস-সহ আরও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী জোদ্দার বাড়ির নিচে বিলে নিয়ে যায়।৫৭
পাকিস্তানি সেনাদের ছোট ছোট গ্রুপগুলো বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি করছিল। গ্রামের রাস্তা, বাড়িঘর ও মাঠের মধ্যে থেকে তারা লোকজনকে আটক করছিল। এভাবে রংপুর থেকে শলুয়াগামী রাস্তায় থাকা সেনাদের একটি গ্রুপ নীহার বিশ্বাস এবং রতন বিশ্বাস নামক শলুয়া গ্রামের দুই সহোদরকে আটক করেছিল। ঐ সময়ে তারা মোটর সাইকেলে শলুয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা তাদের দুইজনকে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে শলুয়া বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে প্রথমে তাঁদের রাইফেলের বাট দিয়ে বেদম প্রহার করে। এভাবে পিটিয়ে আধমরা করে দুই ভাইকে হাত ও পা ধরে চ্যাংদোলা করে পার্শ্ববর্তী একটি কাঁটাবনের মধ্যে ছুঁড়ে দেয়। পরে সেখান থেকে তাঁদের তুলে এনে বুট দিয়ে পিষ্ট করে আবার চ্যাংদোলা করে মিলিটারি জিপের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। গণহত্যা শেষে চলে যাওয়ার সময়ে তারা এই দুই ভাইকে আহত অবস্থায় জিপের মধ্যে করে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাঁদের লাশও পাওয়া যায়নি।
মিলিটারিদের একটি দল প্রবেশ করেছিল রংপুরের জোদ্দার বাড়িতে। সেখান থেকে তারা বেশ কয়েকজনকে অস্ত্রের মুখে আটক করে বিলে নিয়ে যায়। মিলিটারিদের গ্রুপগুলো গ্রামের মধ্যে যাকে যেখানে পাচ্ছিল, সেখান থেকেই আটক করছিল। একপর্যায়ে এই আটককৃতদের নিয়ে তারা স্থানীয় জোদ্দার বাড়ির পাশে বিলের মধ্যে জড়ো করে। আটককৃতদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক পঁয়ত্রিশ জন। এঁদের মধ্যে শুকলাল জোদ্দার নামক আনুমানিক বারো বছরের একটি ছেলেও ছিল। মিলিটারিরা তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলে। ছাড়া পেয়ে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর মিলিটারিরা আটককৃত সবাইকে উপুড় করে মাঠের মধ্যে শুইয়ে দেয়। উল্লেখ্য, এখানে লাইনে দাঁড় করানো অনেকেই ছিল ষাট ও সত্তরোর্ধ্ব মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তাঁদের ছিল না। উপুড় করে শুইয়ে দেওয়ার পরে তাঁদের উপর উপর্যুপরি বেয়নেট চার্জ করা হতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বেয়নেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে অনেকে আর্তনাদ করতে থাকেন, কেউ কেউ উঠে দৌড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচানোর অন্তিম চেষ্টা করেন। কিন্তু এভাবে যাঁরা পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন। এভাবে ঘণ্টাখানেক ধরে গণহত্যা ও নির্যাতন চালানোর পরে পাকিস্তানি সেনারা রংপুর ত্যাগ করে গাড়িতে উঠে খুলনার দিকে চলে যায়।৫৮
অন্তত ত্রিশ জনকে ঐ দিন বিলের মধ্যে শুইয়ে দিয়ে বেয়নেট চার্জ করা হয়েছিল। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই স্বামী-সন্তান-স্বজন হারাদের অসহায় আর্তনাদ আর কান্নায় রংপুরসহ সমীপবর্তী এলাকার পরিবেশ শোকার্ত ও ভীতিবিহ্বল হয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে যারা বেঁচে ছিলেন, তাদের চিকিৎসার জন্য উন্মাদপ্রায় স্বজনরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। ঐ দিনই গ্রামটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। পরদিন থেকে গোলার ধান, পুকুরের মাছ, গাছের ফল, গোয়ালের গরু ইত্যাদি অবাধে লুঠ হয়ে যেতে থাকে। এই গণহত্যায় শহিদদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। কারণ, গ্রামে সেদিন বেশ কয়েকজন বহিরাগত ছিলেন। এছাড়া রংপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাঠে কয়েকজন শূকর পালক শূকর চরাচ্ছিলেন। মিলিটারিরা তাদের একজনকেও গুলি করে হত্যা করেছিল বলে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, তাঁদের সাথে থাকা আরও কয়েকজন শূকর পালক সেদিন নিহত হয়েছিলেন। রংপুর ও শলুয়া গ্রামের মোট বারোজন এই গণহত্যায় মারা গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়া বেয়নেট ও গুলিতে আহত হয়েছিলেন অন্তত বাইশজন।
আহত হয়ে যাঁরা বেঁচে ছিলেন তাঁরা হলেন: চিত্তরঞ্জন গাইন, যোগেশচন্দ্র রায়, বিনোদবিহারী পরিমল মৈত্র, শিবপদ ঢালী, উপেন্দ্রনাথ ঢালী, দিলীপ মণ্ডল, বিশ্বাস, পুলিনবিহারী বিশ্বাস, মন্তুরাম বিশ্বাস, সুভাষ বিশ্বাস, প্রবোধ বিশ্বাস, অতুল মণ্ডল, বৈদ্যনাথ জোদ্দার (বুদ্ধদেব), কেতু জোদ্দার, হরেন্দ্রনাথ জোদ্দার, প্রমথ জোদ্দার, কালীপদ জোদ্দার (ম্যানেজার), অধর জোদ্দার, মহাদেব জোদ্দার, অশ্বিনী জোদ্দার, বিজয় কীর্তনীয়া, বুচো কীর্তনীয়া, লালচাঁদ বিশ্বাস নালা ও খগেন্দ্রনাথ জোদ্দার।৫৯
……………………………………………………
৫৫. সাক্ষাৎকার, সন্দীপক মল্লিক (রংপুর, ডুমুরিয়া), ১৫ এপ্রিল ২০১৫।
৫৬. রশীদ হায়দার (সম্পা.), শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ, প্রথম প্রকাশ (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৮৫), এন্ট্রি
৫৭. সাক্ষাৎকার, উর্মিলা বিশ্বাস (শহিদ ইন্দুভূষণ বিশ্বাসের স্ত্রী, রংপুর, ডুমুরিয়া), ১৬ এপ্রিল ২০১৫।
৫৮. সাক্ষাৎকার, পরিমল মৈত্র (রংপুর, ডুমুরিয়া), ১৬ এপ্রিল ২০১৫। সাক্ষাৎকার, সুভাষ বিশ্বাস (রংপুর, ডুমুরিয়া), ১৬ এপ্রিল ২০১৫। সাক্ষাৎকার, চিত্তরঞ্জন গাইন (ডাকাতিয়া, আটরা গিলাতলা, ফুলতলা, খুলনা), ৫ই জানুয়ারি ২০১৬। এই তিনজনকে বিলে শুইয়ে দিয়ে বেয়নেট চার্জ করা হয়েছিল।
৫৯. রংপুর অঞ্চল শহীদ স্মৃতি সংসদ-এর প্রধান কর্ম সংবাহক ড. সন্দীপক মল্লিক এই তালিকাটি তৈরি করেছেন।
……………………………………………………

সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার