You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.24 | জলমা-চক্রাখালি গণহত্যা - সংগ্রামের নোটবুক

জলমা-চক্রাখালি গণহত্যা (২৪ এপ্রিল ১৯৭১)

জলমা স্থানটি বটিয়াঘাটা উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এর পার্শ্ববর্তী দুটি ইউনিয়ন হলো গঙ্গারামপুর ও বটিয়াঘাটা। চক্রাখালি গ্রামটি জলমা গ্রামের পাশেই অবস্থিত। এখানে ‘জলমা-চক্রাখালি হাইস্কুল’ রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল এখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়।

পটভূমি
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা এবং অংশত নদীবেষ্টিত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বটিয়াঘাটা থানার জলমা, বটিয়াঘাটা এবং গঙ্গারামপুর ইউনিয়ন কিছুদিনের জন্য মুক্তিবাহিনীর মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল।৬৬ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে বটিয়াঘাটা থানায় স্বাধীনতা বিরোধীদের উদ্যোগে ‘শান্তি কমিটি’ গঠিত হলে তারা থানার বালিয়াডাঙ্গা, ভাণ্ডারকোট, আমিরপুর এবং সুরখালি ইউনিয়নে দমনপীড়ন, লুণ্ঠন ও নানাবিধ নির্যাতন চালাতে থাকে। এসব নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবার জন্য ওই এলাকার বাসিন্দারা এই মুক্তাঞ্চলে আশ্রয় নেয়। স্বাধীনতা বিরোধীরা একাধিকবার এই মুক্তাঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হয় এবং ২০ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি সেনারা গানবোট নিয়ে জলমা-চক্রাখালি এলাকায় হামলা করে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই এলাকায় হামলা করার অন্য কারণও ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর অল্পকালের মধ্যেই খুলনা শহর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্তিশালী অবস্থান গড়ে উঠলে মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা শহরের অনতিদূরে জলমা- চক্রাখালি হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সড়ক পথে এই স্কুলটি খুলনা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। অস্থায়ীভাবে এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পও গড়ে উঠেছিল। তৎকালীন ইপিআর বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য এখানে প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। খুলনার বিভিন্ন অভিযানে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে এনে চিকিৎসাও করা হতো।৬৭ পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী স্থানীয় গুপ্তচরদের দ্বারা এই সংবাদ খুলনায় পাকিস্তানি সামরিক ক্যাম্পে পৌঁছালে তারা এই স্কুল আক্রমণ করে।

গণহত্যার ঘটনা
২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা জলমা-চক্রাখালি হাই স্কুলের পাশের নদী থেকে গানবোটের মাধ্যমে স্কুল ভবনে গোলাবর্ষণ করে। সেখান থেকে কোনোরকম প্রতিরোধ না পেয়ে তারা গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং অগ্নিসংযোগ ও লুঠপাট চালাতে থাকে। মিলিটারির আগমন টের পেয়ে এবং গোলাগুলির শব্দে স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা পলায়নপর এই মানুষদের ওপর গুলি চালায়। তবে এখানে তারা সম্ভবত মুক্তিবাহিনী কর্তৃক পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ব্যাপক গণহত্যায় লিপ্ত হয়নি।
মিলিটারির গুলিতে চক্রাখালি গ্রামের রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, চন্দ্রকান্ত রায় এবং কৃষ্ণপদ হালদার নিহত হন। বেশ কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে দুইজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন: কালিপদ ঠিকাদার ও নারায়ণ বিশ্বাস (চক্রাখালি)।৬৮
……………………………………………………
৬৬. অচিন্ত্য বিশ্বাস, “বটিয়াঘাটা”, অন্তর্গত, আবু মো. দেলোয়ার হোসেন (সম্পা.), মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, ২য় খণ্ড (ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ, ১৯৯৯), পৃ. ২০৬। সাক্ষাৎকার, অচিন্ত্য বিশ্বাস, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
৬৭. সাক্ষাৎকার, নিরঞ্জন রায় (মুক্তিযোদ্ধা, চক্রাখালি, বটিয়াঘাটা), ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
৬৮. সাক্ষাৎকার, নিরঞ্জন রায় (মুক্তিযোদ্ধা, চক্রাখালি, বটিয়াঘাটা), ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
……………………………………………………