You dont have javascript enabled! Please enable it! নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ - সংগ্রামের নোটবুক

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এবং ‘৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। যখনই বাঙ্গালি জাতি শিকার হয়েছে শোষণের, মুখ থুবড়ে পড়েছে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ তখনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকবৃন্দ এগিয়ে এসেছেন দিকভ্রষ্ট জাতিকে পথ দেখাতে। দুর্বার আন্দোলন আর বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে তারা জাতিকে দিয়েছেন নতুন দিনের সন্ধান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সেনাশাসনের কষাঘাতে জাতি যখন রক্তাক্ত তখন স্বৈরশাসক এরশাদের সরকারের পতন ঘটাতে দুর্বার আন্দোলনে স্মরণীয় ভূমিকা রাখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জিতে নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থান এক উজ্জ্বল অধ্যায়। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনে নিপীড়িত জনগণ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মুখর হয়ে উঠল নব্বইয়ের শেষভাগে এসে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঠিকই ছাপ রেখে যায়। ১৯৯০ এর অক্টোবরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন যখন দানা বাঁধছে, তখন সামরিক জান্তার নির্দয় নির্যাতনের শিকার জাতীয় ও ছাত্র নেতারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা নিজের হল থেকে নিরাপত্তার খাতিরে শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি হলে এসে আশ্রয় নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ স্বভাবতই আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে।
ডাক্তাররাও পিছিয়ে ছিলেন না, এরশাদ সরকার ঘোষিত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে বিএমএ’র ব্যানারে ডাক্তাররা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২৭ নভেম্বর তৎকালীন পিজি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে বিএমএ’র এমনই একটি সভায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে যাবার পথে এরশাদ সরকারের ভাড়াটিয়া গুন্ডাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-৩৪ ব্যাচের ছাত্র, ফিজিওলজি বিভাগের প্রভাষক ডাঃ শামসুল আলম খান মিলন। এতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন বেগবান হয় এবং ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।
১৯৯০ এর গণ আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের যেসব চিকিৎসক-ছাত্রবৃন্দ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তন্মোধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তৎকালীন বিএমএ-র মহাসচিব ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ডাঃ জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু, শহীদ ডাঃ শামসুল আলম খান আলম, ডাঃ মুশতাক হোসেন, ডাঃ মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীসহ অন্য নেতৃবৃন্দ৷
অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ডাঃ নাজমুল হাসান কিশোর, আখতারুজ্জামান, আসাদ, লিয়াকত হোসেন, আব্দুল হানিফ টাবলু, আব্দুল্লাহ আলমগীর, মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, জাফরুল হান্নান লিটন, মীরজাহান, মনিলাল আইচ লিটু, ফরহাদ আলী খান, মশিউর রহমান, কামরুল হাসান মিলন, জহিরুল করিম, কাজী সাইফুদ্দিন বেনুর, শফিকুল আলম চৌধুরী শামীম, মেজবাহ, দেবেশ চন্দ্র তালুকদার, আবেশ, আহমেদ জাহিদ হোসেন সোহেল, রাশেদুজ্জামান শাহ পাপ্পু, হিমু, কাউসার, মাহবুবুর রহমান লিটনসহ অন্যরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শহীদ ডাঃ মিলনের লাশ নিয়ে মিছিল বের হয় ও ঢাকা মেডিকেল শিক্ষক সমিতি মিলন হত্যার প্রতিবাদে পদত্যাগ করে। শুধু তাই নয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল ভাষাসৈনিক এম কবির উদ্দিন আহমদও পদত্যাগ করেন। তিনিই প্রথম সরকারি কর্মকর্তা যিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রথম পদত্যাগ করেছিলেন।

সূত্র: ঢাকা মেডিকেল কলেজ: সেবা সংগ্রাম ঐতিহ্য – অধ্যাপক ডাঃ মনিলাল আইচ লিটু, এম আর মাহবুব