You dont have javascript enabled! Please enable it!

কেরানীগঞ্জ গণহত্যা, ঢাকা

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ। পাক সেনাবাহিনী একাত্তরের ২ এপ্রিল হামলা চালিয়ে জিনজিরা, সুভাড্যা ও কালি নদী ইউনিয়নের লোকদের উপর গুলি, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন শুরু করে। হামলার পূর্ব রাতে অনেক স্থানে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল যে, কেরানীগঞ্জে মিলিটারী আসতে পারে। সেই গুঞ্জন সত্যে পরিণত হয় এবং মেশিনগান আর মর্টারের তীব্র শব্দে ঘুমে অচেতন কেরানীগঞ্জবাসীদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। চারদিকের চিৎকার, কান্নাকাটি, আতঙ্ক, ভয় আর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে লোকজন ক্ষেতের মধ্যে, ঝোপঝাড়, পুকুর, ঘরের ছাদে যে যেখানে পারলো আত্মগোপনের চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে পাকসেনাদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে যায়। এ অভিযানে বিগ্রেডিয়ার বশীর ও তার সহযোগিরা কাউকেই রেহাই দিতে চায়নি।
ধর্ষিত হলো কেরানীগঞ্জের অসংখ্য নারী। প্রতি ঝোপঝড়, নালা-ডোবা, কাশবনে পাওয়া যায় অসংখ্য লাশ। এমন কোনো বাড়ি ছিল না যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। শহর থেকে এখানে আসা ও আশ্রিত অনেক অপরিচিত লোকেরও লাশ কবর দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। মোন্দাইল সড়কের সামনের পুকুর পাড়ে দস্যুরা এক স্থানেই ষাটজন মানুষকে হত্যা করেছে।
কালি নদীর এক বাড়িতে ১১ জন মহিলার ওপর নির্যাতন চালিয়ে ব্রাশ ফায়ারে তাদের হত্যা করে। পিতার কাছ থেকে কন্যাকে ছিনিয়ে নেয়া, ভাইকে বোনের সামনে মারা, সন্তান-সম্ভবা মাকে ছেলের সামনে হত্যা করা, বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিকৃত বীভৎস বহু লাশ কুকুরকে খেতে দেখার মতো অভিজ্ঞতার স্মৃতি নিয়ে কেরানীগঞ্জের অনেক মানুষ আজও বেঁচে আছেন।
[৬৩৫] হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!