You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোপালনগর গণহত্যা, পাবনা

বর্বর হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট শনিবার বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ফরিদপুর থানার বনওয়ারীনগর ইউনিয়ন বর্তমানে ফরিদপুর পৌরসভার অন্তর্গত গোপালনগর গ্রাম। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঐ গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ চন্দ্ৰ দত্ত, সে কোনো রকমে ঐ ঘটনার সময় প্রাণে বেঁচে যায। ২০ আগস্ট শুক্রবার গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও ঘাতক দালাল রাজাকাররা মিলে গোপালনগর গ্রাম ঘিরে ফেলে। দালালদের চিনিয়ে দেয়া প্রত্যেক বাড়ি থেকে পাকিস্তানি আর্মিরা মানুষজনদের ধরে এনে কালীবাড়ির আটচালায় জমায়েত করতে থাকে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ধরে কালীবাড়ি নিয়ে আসার সময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে ধীরেন সরকার ও মোঃ এনতাজ সরকার আর্মিদের গুলিতে নিহত হন এবং সুভাষ সরকার, শ্রীমতী গোপা সরকার ও বিকাশ চন্দ্র দত্ত প্রাণরক্ষা করতে সমর্থ হয়। ফরিদপুর থানা আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা মোঃ কাসেম মোল্লাকে ধরে নিয়ে এসে কালীবাড়ির আটচালায় সবাইকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এ সময় ভৈরব কর্মকার দৌড়ে পালাতে গেলে আর্মিরা তার ওপর মেশিনগানের ব্রাশফায়ার করে, তার দেহ লুটিয়ে পড়ে গোপালনগর বাজারে। ঠিক বেলা ১১টায় গোপালনগর গ্রামের ২৯ জনকে কালীবাড়ির আটচালায় লাইন ধরে দাঁড় করানো হয। এরপর তাদের মেশিনগান তাক করে শে-াগান দিতে বলে, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ, কায়েদে আজম জিন্দাবাদ।’ হঠাৎ গজে ওঠে হানাদার বাহিনীর মেশিনগান। মুহূর্তে ওই সব নিরীহ মানুষজনের রক্তে রঞ্জিত হয় মাটি, সেখানে সৃষ্টি হয় লাশের স্তূপ। এরপর ঐ নরপশুরা চারদিকে আগুন জ্বালাতে থাকে। সম্পূর্ণ বনওয়ারীনগর হাট এবং আশপাশের এলাকা পুড়িয়ে ফিরে যায় তারা। আর্মিরা চরে যাওয়ার পরে বিকেলে গ্রামের ভীতসন্ত্রস্ত এলাকাবাসী ছিন্নভিন্ন লাশের স্তূপের মধ্যে পচা ঘোষ এবং অনিল কর্মকার এই দুজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। মৃত ২৭ জনের মধ্যে কয়েকজনকে মাটিচাপা দিতে পারলেও অধিকাংশ মৃতদেহ বড়াল নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
[৬৪১] মোঃ জহুরুল ইসলাম বিশু

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!