হামিদা জুট মিল বধ্যভূমি, চাঁদপুর
বৃহত্তর কুমিল্লার হাজীগঞ্জেও পাওয়া গেছে বধ্যভূমি আর গণকবরের সন্ধান। এই ব্যবসা কেন্দ্রটিতে নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা চলেছে নির্বিবাদে। ১৯৭২-এ ‘সংবাদ’ প্রতিনিধি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন— ‘ডাকাতিয়া নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত মাকিমাবাদের জলাভূমিতে প্রায় তিন শ মাথার খুলি এবং মানুষের হাড় বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় হামিদা জুট মিলকে বর্বর পাক পশুরা ৩ হাজার বাঙালি নিধনের বধ্যভূমিতে রূপান্তরিত করেছিল। সেকেন্দার আলী প্রতিনিধিকে জানান, প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বাঙালি যুবকদেরকে এখানে ধরে এনে সারারাত পাক পশুরা নির্যাতন চালাত। তারপর তাদের কয়েক জনের হাত-পা একসাথে বেঁধে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্থায় ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিত। … একমাত্র বারকুল গ্রামেই বর্বর বাহিনী এবং তাদের চাঁইয়েরা ১২০ জন আবালবৃদ্ধবনিতাকে খুন করেছে। অনেক বালিকাকে পাশবিক অত্যাচার করেছে এবং দালালদের সহযোগিতায় ৪ মে গ্রামটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এ থানায় এমন কোনো গ্রাম নেই বললেই চলে, যেখানে অগ্নিসংযোগ, লুট এবং নারী নির্যাতন করা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে প্রকাশ, মুজাফফরগঞ্জে এই বর্বরতা চরম রূপ নিয়েছিল। এখানে এক বাড়িতে ২ জন রাজাকার একটি বালিকাকে ধর্ষণে প্রবৃত্ত হলে বাড়ির অন্যান্য লোক তাতে বাধা দেয়। পরদিন একদল রাজাকার এবং দখলদার বাহিনীর লোকজন সেই বাড়ি আক্রমণ করে ৩৭ জন লোককে হত্যা করে। শুধু এতেই নিবৃত্ত ছিল না ডাল কুত্তার দল, সেই বাড়ির ৪টি বালিকাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করতে থাকে এবং ৩-৪ দিন পর তাদের মৃতদেহ পাশের একটি খালে ভাসতে দেখা যায়।
[১৩৭] সুকুমার বিশ্বাস
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত