হরিণাগোপাল ও বাগবাটি বধ্যভূমি, সিরাজগঞ্জ
১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে নিহতদের বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়েছে সিরাজগঞ্জের হরিণাগোপাল ও বাগবাটি গ্রামে। শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে সদর থানার বাগবাটি ইউনিয়নের মধ্যে গ্রাম দুটি। হরিণাগোপাল ও বাগবাটি গ্রামে বলরাম নমদাসের বাঁশঝাড় এবং খুদু রায়ের কুয়ার এলাকাজুড়ে রয়েছে একাত্তরের বধ্যভূমি। এছাড়া উত্তর আলোকদিয়া শ্মশানেও রয়েছে বধ্যভূমি।
হরিণাগোপাল ও বাগবাটিকে নিরাপদ ভেবে পাকবাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য এখানে আশ্রয় নিয়েছিল বগুড়া, শেরপুর, চান্দাইকোনা এবং রায়গঞ্জের বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ। সঙ্গে ছিল তাদের সারাজীবনের সঞ্চিত টাকা-পয়সা আর সোনা-দানা।
পাকহানাদার বাহিনীর নির্মমতা, পৈশাচিকতার বর্ণনা দিতে গিয়ে হরিণাগোপাল গ্রামের মঙ্গল মালাকার জানান, সেদিন ছিল ৩১ মে, ভোর ৫টার আগেই দুই গ্রামের আশ্রয়কেন্দ্রটি ঘিরে ফেলেছিল সশস্ত্র পাকসেনারা। সঙ্গে ছিল তাদের স্থানীয় দোসর। প্রথমে বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের দিক থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসে। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় ঘুমন্ত মানুষের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ। পাকসেনারা লুটতরাজ, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটায়।
৫০ বছর বয়সী পরেশ চন্দ্র বর্ণনা দেন। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। সে সময় ঘন বাঁশঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রায় অচেতন পরেশ দেখতে পান দাউ দাউ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে গোটা গ্রাম।
ব্যবসায়ী প্রভাষ চন্দ্র দেব বলেন, পাকবাহিনীর সেদিনের নারকীয় ঘটনার সময় তার বাবা পাকবাহিনীর দুজনকে জাপটে ধরে ছিলেন অনেকক্ষণ। ঘটনায় হতবিহ্বল দুই পাকসেনা কিছুতেই ছাড়াতে পারে না তাকে। পরে হুইসেল বাজিয়ে অন্যদের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করা হয়।
মঙ্গল মালাকার জানান, ভোর ৫টা থেকে বিরতিহীন এ হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। পাকসেনারা চলে যাওয়ার পর তিনি নিজেই ছড়িয়ে- ছিটিয়ে থাকা ৮০টি মৃতদেহ গুনেছেন।
প্রভাত চন্দ্রের মা বাসনা রানী ঐ গণহত্যায় হারিয়েছেন তার স্বামীকে। তিনি নিজে কখনো এ গ্রামের এক ইঞ্চি মাটিও খুঁড়তে দেন না তার সন্তানদের। তার ধারণা গোটা গ্রামের মাটির নিচে ঢেকে আছে স্বজনের হাড়। প্রায় ৮০ জন এখানে শহীদ হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
[৩৯১] হেলাল উদ্দিন ও কবীর আজম
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত