সোনারগাঁয়ে খানসেনা ও রাজাকারদের নির্যাতন, নারায়ণগঞ্জ
‘৭১-এর মে মাসে শাহপুর গ্রামের শম্ভু ঘোষের বোন বিভা রানী ঘোষকে এ এস এম সোলায়মানের সহযোগী জমির আলী কেরানি (দালাল) পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। পাকবাহিনীর সদস্যরা বিভা রানীর ওপর সারা রাত পাশবিক নির্যাতন চালানোর পর অর্ধমৃত অবস্থায় ছেড়ে দেয়। বিভা রানী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এছাড়া জমির আলী কেরানির নেতৃত্বে পাকবাহিনী বৈদ্যেরবাজার স্কুলের পূর্ব-উত্তর দিকে নরেন্দ্র প্যাটেলের বাড়িতে হামলা করে। সম্মানদী গ্রামে শতাধিক, কোম্পানীগঞ্জে দশটি, সাথীপুরে পাঁচটি এবং পিরোজপুর গ্রামের সব বাড়িই রাজাকাররা জ্বালিয়ে দেয়।
হারিয়া গোপিন্দি গ্রামের মোসাম্মৎ আজিমোন নাহার গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তার স্বামী মোহাম্মদ সিদ্দিক মিয়াকে ১৪ ডিসেম্বর ‘৭১ সন্ধ্যা ৭টায় আদমজী এলাকায় হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে সোলায়মানের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় রাজাকাররা জড়িত ছিল। তিনি তার স্বামী মোহাম্মদ সিদ্দিক মিয়ার হত্যার বিচার দাবি করেন।
হাতকোপা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী সুমন জানিয়েছেন, ‘টেক্কা সামসুর (দালাল) নেতৃত্বে পাকবাহিনী হাতকোপা গ্রামে তাদের বাড়ি আক্রমণ করে। আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল বাড়ির যুবতী মেয়েদের ধরে আনা। সামসুর নেতৃত্বে পাকবাহিনী তাদের বাড়িতে ঢুকলে বাড়ির মেয়েরা পার্শ্ববর্তী পাটক্ষেতে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করে।’
বসন দরদী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম নূরু তদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন: ‘ভৌগোলিক দিক থেকে সোনারগাঁ বন্দর এলাকা হওয়ায় সার্বক্ষণিকভাবে সে অঞ্চল দিয়ে পণ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের নৌকা, ট্রলার, জাহাজ চলাচল করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে এ এস এম সোলায়মান রাজাকার বাহিনী গঠন করে ওই সব পণ্যবাহী নৌযানের যাবতীয় চাল, চিনি, ময়দা, তেল, সার, চা লুট করত। ব্যবসায়ীরা পণ্য হারিয়ে এ ব্যাপারে সম্মানদী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়ে যেত।’ নূরুল ইসলাম আরো জানিয়েছেন, ‘৭১-এ সোনারগাঁ থানার সম্মানদী গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ট্রেনিং ক্যাম্প স্থান করে। এ সংবাদ রাজাকাররা পাকবাহিনীকে জানালে পাকবাহিনী সম্মানদী গ্রামে আক্রমণ চালায়। বিশ-পঁচিশজন রাজাকারসহ শদুয়েক পাকসেনা সম্মানদী গ্রামে হামলা চালায়। রাজাকাররা যাওয়ার সময় দুজন মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত