You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.25 | সোহাগপুর বিধবাপল্লী গণহত্যা, নালিতাবাড়ি | শেরপুর - সংগ্রামের নোটবুক

সোহাগপুর বিধবাপল্লী গণহত্যা, নালিতাবাড়ি, শেরপুর

একাত্তরে পাক সেনাবাহিনীর বর্বরতা আর নির্বিচারে গণহত্যা কিছু মানুষের জীবনধারাই শুধু বদলে দেয় না, বদলে দেয় অনেক গ্রামের নামও। শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী কাকরকান্দি ইউনিয়নের ‘সোহাগপুর’ গ্রামের নামটি আজ ‘সোহাগপুর বিধবাপল্লী’।
গ্রামটিকে জড়িয়ে আছে উত্তর-পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িভোগাই ও দক্ষিণে সুতিয়া নদী। নিরিবিলি এই শান্ত-গ্ধি গ্রামে একাত্তরের ২৫ জুলাই, সকাল ৭টায় মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আল-বদর, রাজাকারদের সহায়তায় ১৫০ জন পাকবাহিনীর একটি দল প্রফুল্ল বণিকের দীঘি থেকে সাধুর আশ্রম পর্যন্ত এলাকা ঘিরে ফেলে চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। হামলার প্রথম শিকার হন রমেশ রিসিল, চট পাথাং, মিরিশ গিব্রিল নামে তিন আদিবাসী। এরপর মাঠে কাজ করারত আবাদের ক্ষেতে অনেককে হত্যা করে। কেউ কেউ ঘরে, ঘরের খিড়কি খুলে, গাছের ডালে, ঝোঁপে পালাতে চেষ্টা করলেও যাকে যেভাবে পেয়েছে তাকে সে অবস্থায়ই গুলি করে হত্যা করেছে। কোরান শরিফ বুকে জড়িয়ে ধরেও রেহাই পায়নি। অনেককে গুলির পর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এভাবে নিহত হয় এ গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষ। গ্রামের সব পুরুষ মানুষকে হত্যা করায় গ্রামটির নাম হয়ে যায় ‘বিধবাপল্লী’।
সেনাবাহিনী চলে যাবার পর কিছু লোক গ্রামে ফিরে আসেন। রাতেও পাকবাহিনী আসতে পারে এই আতঙ্কে যাকে যেভাবে পেরেছে ছেড়া শাড়ি, মশারি, কলাপাতা পেঁচিয়ে এক কবরে ৭-৮ জনকে একত্রে কোনোমতে লাশগুলো মাটি চাপা দিয়ে দ্রুততায় গ্রাম ছেড়ে যান। স্বামী হারানোর দুঃখ-বেদনার ক্ষত আর সেদিনের বিভীষিকার স্মৃতি নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন অনেকে। উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সোহাগপুর বিধাবপল্লী পুনর্বাসন ট্রাস্ট গঠন করা ছাড়াও সেখানে শহীদদের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
[৬০৩] হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত