স্বরূপকাঠি গণহত্যা, বরিশাল
পাকবাহিনী বরিশালের স্বরূপকাঠি থানায় বিশ্বের ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়। একমাত্র আটঘর কুড়িয়ানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে একটি ডোবায় ৪০০ লোক হত্যা করে পুঁতে রাখে। স্বাধীনতার পর এ স্থান হতে কয়েকশ মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। জেলার বিভিন্ন স্থান হতে হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ কর্মী ও সিরাজ সিকদারের দল পেয়ারাবাগানে চলে আসে। কয়েকশ পাকবাহিনী মেজর নাদের পারভেজের নেতৃত্বে চারদিক হতে পেয়ারাবাগান ঘিরে ফেলে এবং হাজার হাজার পেয়ারাগাছ কেটে বাগান ধ্বংস করে। সমগ্র থানায় তারা ধ্বংসলীলা চালায়। তাদের হত্যাযজ্ঞ জার্মানির হিটলারকে হার মানিয়ে ছিল। মে, জুন ও জুলাই মাস ধরে তাদের নারকীয় হত্যা চলে এবং কয়েক হাজার লোক গুলি করে হত্যা করে। ২৪ মে পাকবাহিনী দৈহারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সতীশ শেখ রায়ের বাড়ির সম্মুখে ১৭ জনকে হত্যা করে। ২৪ মে পাকসেনারা গণকপাড়া, বাঁশতলা, দৈহারী করফা, গয়েসকাঠি, ছৈলাবুনিয়া, খলিয়া, আমতলা, সারেংকাঠি, পশরিবুনিয়া, তুতখালী, খাড়াবাগ প্রভৃতি ১৪টি গ্রাম, দৈহারী বাজার ও স্কুল পুড়ে দেয় এবং ক্যাপ্টেন এজাজের নির্দেশে ১০৬ জনকে হত্যা করে। মাওলানা আবদুল কাদের পাকবাহিনীর সাথে ছিল। মে ও জুন মাসে স্বরূপকাঠি থানার প্রায় গ্রামে পাকসেনারা অপারেশন চালায়। ২৯ মে খারাবাক গ্রামে অঞ্জলি রানী কর্মকারকে পাকসেনারা হাত-পা বেঁধে জীবন্ত পুড়ে হত্যা করে। বরিশাল হাটখোলার দিপালীর মা সম্ভ্রম রক্ষার জন্য মেয়েকে ফেলে পালতে সক্ষম হয়। পাকসেনারা ক্রুদ্ধ হয়ে ৮ মাসের দিপালী রায়কে পেট চিরে হত্যা করে। ১৬ ও ১৭ জুন পাকসেনারা জলাবাড়ি ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম আক্রমণ করে কয়েকশ লোক হত্যা করে। ১৭ জুন পাকবাহিনী ঝালকাঠির শিখা রানী মণ্ডলকে পাশবিক অত্যাচার করে হত্যা করে। মা শিখা রানীকে ফেলে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল। ৩ ঘণ্টা পরে এসে দেখে তার কন্যা শিখা রানী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্বরূপকাঠি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী শামসুল হক ছিলেন একজন বিপ্লবী বাঙালি। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তিনি জুতা পরবেন না। স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতারা তাকে ১০ জুন পুলিশের সহায়তায় ধরিয়ে দেয় এবং ৩০ জুন তাকে হুলারহাট ঘাটে ক্যাপ্টেন এজাজের নির্দেশে হত্যা করে।
[১৩৫] সিরাজউদ্দীন আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত