You dont have javascript enabled! Please enable it!

সুন্দিশাইল গণহত্যা, সিলেট

সুন্দিশাইল গ্রামটি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার পূর্ব প্রান্তে। ২৪ অক্টোবর ইমান আলী নামের আমুড়া গ্রামের এক রাজাকার ছদ্মবেশে ঢোকে সুন্দিশাইলে। মুক্তিবাহিনীর অবস্থান জেনে সাথে সাথে খবর পৌঁছে দেয় পাকবাহিনীর কাছে।
পরদিন ২৫ অক্টোবর সকাল দশটার মধ্যেই সুন্দিশাইল গ্রামটি ঘেরাও হয়ে যায় শত শত পাকসেনা ও রাজাকার দ্বারা। বিয়ানীবাজার থেকে এক ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী এসে অবস্থান গ্রহণ করে গ্রামের পূর্ব প্রান্তের গরুখালের হাওরে। চারখাই থেকে দ্বিতীয় বাহিনী উত্তর দিকে কাজিমপুরের হাওরে অবস্থান নেয়। সিলেট ও গোলাপগঞ্জ থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ বাহিনী দক্ষিণে আমুড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়। শুরু হয় গুলিবর্ষণ। বৃষ্টির মতো গুলি ঝরে পড়তে থাকে গ্রাম জুড়ে। এদিকে সুন্দিশাইলের নিরস্ত্র জনগণের কথা চিন্তা করে মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ না করে জঙ্গলে আত্মগোপন করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে এবং বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধরে নিতে শুরু করে লোকজনকে। ১৭ নিরস্ত্র লোককে ধরে নিয়ে গিয়ে মোকামটিলায় তাঁদের তাক করে পাকবাহিনী গুলি করতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় তাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ। ফলে, পাকবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায় ১৭ জন নিরপরাধ মানুষ। আর এখানকার লড়াইয়ে শহীদ হন পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা। তারপর পাক দস্যুরা একাধিক গ্রুপে ভাগ হয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড শুরু করে।
একটি গ্রুপ যায় তোতা মিয়ার বাড়িতে। ধরে আনে তোতা মিয়া, মবশ্বর আলী, আমীর হোসেন, আজাদ হোসেন, মইন উদ্দিন, মস্তন মিয়া, চেরাগ আলী ও হাফিজ আলীকে। এদের প্রত্যেককে গুলি করে তারা তিনটি আলাদা লাইনে দাঁড় করিয়ে। এদের কয়েকজন শরীরের কোনো কোনো অংশ হারিয়েও আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যান। পাক হায়েনারা তারপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাঁকে যেখানে যে অবস্থায় পায়, সে অবস্থায়ই গুলি করেছে। অনেকে হাওরে ঝাঁপ দিয়ে বা জঙ্গলের ভেতর ঢুকে কোনো রকমে আত্মরক্ষা করেন। শুধু তাই নয়, শারীরিক নির্যাতন চালায় তারা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের ওপর। এলোপাতাড়ি গুলির আঘাতে অসংখ্য লোক পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এঁদের লাশ পড়ে থাকে যথাস্থানে। আহতদেরও সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। জীবিত গ্রামবাসীরা ভয়ে পালাচ্ছেন গ্রাম ছেড়ে। এমনি অবস্থায় পরদিন আবার বিয়ানীবাজার থেকে একদল পাকসেনার আগমন ঘটে গ্রামে। সাথে পাঁচজন মুক্তিসেনা। এঁদের ধরে আনা হয়েছে কোথাও থেকে। তারপর এক লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয় সেই পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধাকে সুন্দিশাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে। সেখানে ২৩ জন শহীদ স্মরণে গড়ে উঠেছে মিনার
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!