You dont have javascript enabled! Please enable it!

সুপাতলা গণহত্যা, সিলেট

২৩ জুলাই দেশের ভেতরের সংবাদ সংগ্রহ করতে সিলেটের বিয়ানীবাজার আসেন একজন কুরিয়ার। নাম তাঁর গোলাম মোস্তফা। আশ্রয় গ্রহণ করেন বিয়ানীবাজার থানা সদরের অদূরে সুপাতলা গ্রামে। এ গ্রামের মনোরঞ্জন ঘোষ তাঁকে আশ্রয় দিয়ে নিজ বাড়িতে রাখেন অত্যন্ত গোপনে। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দালালদের মাধ্যমে এই সংবাদটি যথাসময়ে পৌঁছে যায় গণ্ডলের মজলিশে শুরায়। সাথে সাথে মনোরঞ্জনের বাড়িতে হাজির হয় একদল সৈন্য। সঙ্গে অগণিত রাজাকার। ততক্ষণে গোলাম মোস্তফা তাঁর কাজ সমাপ্ত করে চলে গেছেন গ্রাম ছেড়ে কিন্তু মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবার হলো পাক হায়েনাদের শিকার। বন্দি করা হলো তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে। তাঁদের সবাইকে আটকে রাখে ক্যাম্পে। রাতব্যাপী চলে অমানুষিক নির্যাতন। সুপাতলা গ্রামের মনোরঞ্জনের পরিবারকে হত্যার পর তাঁদের বাড়ি প্রথমে লুটপাট এবং পরে ভস্মীভূত করা হয়। এ গ্রামের মিছির আলীকেও পাক সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।
২৪ জুলাই। ঘোষ পরিবারের দেড় বছরের শিশুসহ ১৪ জন সদস্যকে নিয়ে যাওয়া হলো রাধুর টিলায়। বিয়ানীবাজার-সিলেট সড়কের পাশ ঘেঁষে অবস্থিত এই টিলার ওপর নিয়ে সবাইকে এক সারিতে দাঁড় করায় হায়েনারা। বারবার পরখ করে সোজা করা হলো সারিটি। এ সময় সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সশস্ত্র পাকসেনা। বারবার প্রত্যক্ষ করে সারিটি সুশৃঙ্খল করার পর নির্দেশ এল, ‘ফায়ার’। সাথে সাথেই গর্জে ওঠে আগ্নেয়াস্ত্র। লুটিয়ে পড়ে ঘোষ পরিবারের স্ত্রী-পুরুষ, শিশু- বৃদ্ধসহ ১৪টি তাজা প্রাণ। ওই বধ্যভূমিতেই তাঁদের কবরস্থ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে এই টিলার নামকরণ করা হয় শহীদ টিলা। এ টিলাতেই স্থাপিত হয়েছে বিয়ানীবাজার ‘কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ’।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!