You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.24 | সূর্যদী গণহত্যা | শেরপুর - সংগ্রামের নোটবুক

সূর্যদী গণহত্যা, শেরপুর

২৪ নভেম্বর শেরপুরের সূর্যদী গ্রাম ও আশপাশের এলাকা ভেসেছিল রক্তের বন্যায়। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছিল একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসী। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি। গ্রামবাসী আজও ভুলেনি তাদের ওপর পরিচালিত পাশবিকতার সেই ভয়াল স্মৃতি। দিবসটি এলেই স্বজন হারানোর বেদনায় আর্তনাদে তাদের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠেI
শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কৃষি সমৃদ্ধ গ্রাম সূর্যদী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানা। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় এ গ্রামবাসীর জন্য। দেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকারদের মাধ্যমে খবর পেয়ে হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধা ও আশ্রয়দাতা গ্রামবাসীকে শায়েস্তা করতে ছুটে যায় সূর্যদী গ্রামে।
সেদিন সকাল ৭টা। গ্রামবাসীর কেউ বাড়ির দহলিজে শীতের মিঠে রোদ পোহাচ্ছেন। আবার কেউবা কৃষিকাজ নিয়ে মাঠে ব্যস্ত। এমন সময় বেশ কয়েকটি মিলিটারি জিপ আর ট্রাক বোঝাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শেরপুর সদর থেকে সূর্যদী পৌঁছায়। লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদার বাহিনী ছুড়তে থাকে গুলি। বিকট গর্জন আর ভাঙচুরের শব্দে গ্রামের মানুষ বাঁচার জন্য আশ্রয় নেয় ঝোপজঙ্গল, ধানের ক্ষেতে ও পানের বরজে। কিন্তু তারা কাউকে ক্ষমা করেনি। যাকে যে অবস্থায় পেয়েছে তাকে সেভাবেই হত্যা করেছে। একই সময়ে গান পাউডার ছিটিয়ে দিয়ে এ গ্রামের দেওয়ান বাড়ি, কিরছা বাড়ি ও বড় বাড়ির প্রতিটি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আর গ্রামের যুবক, কিশোর যাদের পায় তাদের ধরে এনে ব্রাশফায়ারে হত্যা করার জন্য দাঁড় করায় স্থানীয় সরকারি প্রাইমারি স্কুলমাঠে। রক্তের নেশায় উন্মুক্ত হিংস্র হায়েনাদের হাত থেকে অসহায় গ্রামবাসীর করুণ পরিণতির কথা ভেবে এ সময় নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সামনে এগিয়ে আসেন ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা। হানাদাররা দ্রুত পিছু হটে যায়। এ যুদ্ধে শহীদ হন খুনুয়া চরপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আফছার আলী।
[৪৩১] মো. আব্দুর রহিম বাদল

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত