You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.08 | সিন্দুরখান বধ্যভূমি | মৌলভীবাজার - সংগ্রামের নোটবুক

সিন্দুরখান বধ্যভূমি, মৌলভীবাজার

শ্রীমঙ্গল থানার সীমান্তবর্তী এক জনপদের নাম সিন্দুরখান। চা বাগান আর গ্রামের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই জনপদে রয়েছে একাত্তরের বধ্যভূমি, যেখানে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে অগণিত নারী-পুরুষকে ধরে এনে অমানবিক নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করেছে পাকহানাদার বাহিনীর লোকরা। তারা কখনো লাশ মাটিচাপা দিত আবার কখনো মাটির ওপর ফেলে রাখত। এ ধরনের লাশ শিয়াল-কুকুর টেনে নিতেও দেখা গেছে।
শ্রীমঙ্গল থানা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সিন্দুরখান বাজার। বাজারসংলগ্ন বিডিআর ক্যাম্পের কাছেই সিন্দুরখান চা বাগানের ৫নং সেকশন। এই সেকশনের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য গণকবরের অস্তিত্ব।
একাত্তরের ১৫ এপ্রিলের পর থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত এখানে শত শত নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল জব্বার জানান, শান্তি কমিটির জনৈক মেম্বার, রাজাকার ও পাক আর্মির কয়েকজন সদস্য মধ্য মের কোনো এক সকালে কনর মিয়া, কটাই মিয়া ও আব্দুল গফুরসহ তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে। সারাদিন তাদের ক্যাম্পে ধরে মারধর করে। ঐদিন দুপুরের দিকে অজ্ঞাত পরিচয় দুই যুবককে তাদের সামনেই গুলি করে হত্যা করে।
বধ্যভূমির প্রত্যক্ষ সাক্ষী কেশব বেনার্জি যার বাড়ি উল্লেখিত বধ্যভূমির পাশেই। তিনি নিজ হাতে ১৮টি লাশ এখানে মাটিচাপা দিয়েছেন।
সিন্দুরখান ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সত্তার জানান, একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর তিনিসহ আরও ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে প্রথম সিন্দুর খান বাজারে আসেন এবং এই বধ্যভূমি থেকে ১৩৫টি মাথার খুলি উদ্ধার করে কয়েকটি ট্যাঙ্কে রাখেন। পরবর্তী সময়ে এই খুলিগুলো ঢাকায় পাঠানো হয় বলে তিনি জানান। প্রত্যক্ষদর্শী আকবর আলী জানান, সুবেদার শের খান বাজারের পাশের একটি বাড়িতে মহিলাদের ধরে এনে নির্যাতন করত। চোখের সামনে বাজারের বটগাছে ঝুলিয়ে গুলি করে মানুষ মারতে তিনি দেখেছেন। তারপর লাশগুলো স্থানীয় রাজাকাররা নামিয়ে বধ্যভূমিতে ফেলে রাখত। শিয়াল-কুকুরকে মানুষের লাশ টেনে নিয়ে যেতেও তিনি দেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একাত্তরের ১১ এপ্রিল তৎকালীন আনসার কমান্ডার মো. মোছাব্বির (প্রয়াত) কালেঙ্গা পাহাড়ে পাকহানাদার বাহিনীর একজন সুবেদার, একজন হাবিলদার, দুজন নায়েকসহ পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করার পর থেকেই পাকবাহিনী পাগলা কুকুরের মতো যেখানে যাকে পেয়েছে ধরে এনে তাকে নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করেছে।
[৩৯৪] বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত