সাহেবগঞ্জের গণহত্যা, রংপুর
রংপুর শহরে থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সাহেবগঞ্জ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ‘৭১-এর পহেলা মে শনিবার ঠিক দুপুর বেলা ৩টি আর্মি ট্রাক সাহেবগঞ্জ এলাকায় এসে দাঁড়ায়। আশপাশের মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। আর্মির গাড়ি ৩টি পনের-বিশ মিনিট হাটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর শহরের দিকে চলে যায়। সাহেবগঞ্জ এলাকার মানুষ ভয়ে ভয়ে থাকে। মধ্যরাতে হঠাৎ করে একটানা গুলির শব্দে জেগে ওঠে আশপাশের মানুষ। প্রাণভয়ে ঝাড় জঙ্গলে যে যেখানে পায় লুকায়। গুলি শেষ হবার প্রায় ১ ঘণ্টা পর চারপাঁচটি আর্মির গাড়ি চারদিকে সার্চলাইটের আলো জ্বেলে নিরীক্ষণ করে চলে যায় শহরের দিকে। সকালে কিছু মানুষের নজরে আসে পাকা সড়কের দক্ষিণ দিকে মাটি কাটা গর্তে পড়ে আছে একগাদা লাশ। লাশগুলো সামান্য মাটিচাপা দেয়া। একজন দুজন করে একত্রিত হলেন অনেকেই। সাহস করে লাশের ওপর দেয়া মাটি সরালেন তারা। আঁতকে উঠলেন সবাই লাশগুলো দেখে। সব লাশই ছিল পেছন দিকে হাত বাঁধা এবং একই রশি দিয়ে পেঁচানো। সবার পরনেই সেনাবাহিনীর পোশাক। জমাট বাঁধা রক্তে পড়ে থাকা লাশগুলো যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করলেন গ্রামবাসী। কিন্তু কাফন পরানো সম্ভব হলো না। আশপাশের সবাই মিলে জানাজা পড়লেন। জানাজা শেষে ১৯জন বাঙালি সৈনিককে কবর দিলেন একই সাথে। তবে একজনের পকেটে একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছিল। ঠিকানা লেখা ছিল মেজর আকবর। বাড়ি ময়মনসিংহ। ২ মে কবরস্থ করা বাঙালি সৈনিক শহীদরা শায়িত আছেন তপোধন ইউনিয়নের বীরচরণ মৌজায়। স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে এ বধ্যভূমিটি দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।
[১৭৪] শাহ আব্দুর রাজ্জাক ও মুকুল মোস্তাফিজ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত