You dont have javascript enabled! Please enable it! সারেং বাড়ি বধ্যভূমি | ঢাকা - সংগ্রামের নোটবুক

সারেং বাড়ি বধ্যভূমি, ঢাকা

রাজধানী ঢাকার মিরপুর শাহ্আলী মাজারের উত্তরে সারেং বাড়ি বধ্যভূমি অবস্থিত। জিরো পয়েন্ট হতে এর দূরত্ব ১৩ কি. মি.। মনির উদ্দিন শাহ্ সাহেবের একটি মাজার রয়েছে এখানে। তিনি সারেং ছিলেন। তাঁর নামেই এলাকাটির নামকরণ করা হয় সারেং বাড়ি।
সারেং বাড়িতে অবস্থিত দুটি কুয়া ও একটি স্যুয়ারেজ রিজার্ভার ভর্তি ছিল শহীদদের লাশে সারেং বাড়ির পশ্চিমে তুরাগ নদীতে ভাসত শয়ে শয়ে লাশ। প্রচুর গাছ-গাছালিতে পূর্ণ ও নির্জন ছিল সারেং বাড়ি। জঙ্গলের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল শহীদদের দেহাবশেষ।
সারেং বাড়ি বধ্যভূমি সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা আসমত ড্রাইভার (৬৭) জানান, আমি পুরো ‘৭১-এ বর্তমান সারেং বাড়ি মাজার ও মসজিদের পূর্বদিকে যে ফাঁকা ঘরটি রয়েছে সেখানে ছিলাম। মাজার দেখাশোনা করতাম। তাই ‘৭১-এ আমার চোখের সামনেই প্রত্যক্ষ করি নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এই জায়গাটি সে সময় ঘন বন ছিল। বিহারিরা মাঝে মধ্যেই বাঙালি ধরে এনে গাছের সাথে ঝুলিয়ে বিভিন্ন তথ্য জিজ্ঞাসা করত। অতঃপর হত্যা করে চলে যেত।
কখনো কখনো বাঙালি ধরে এনে জবাই করে হত্যা করে লাশ কুয়ায় ফেলে দিত। এখানে অবস্থিত দুটি কুয়াই ভর্তি হয়ে গিয়েছিল শহীদদের লাশে। কুয়া দুটি ভরে গেলে লাশ ফেলা হতো স্যুয়ারেজ রিজার্ভারের ভেতর। সেটিও ভরে গেলে জঙ্গলের ভেতর এখানে-ওখানে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে চলে যেত। রাতে শেয়াল ঘুরঘুর করত লাশ খুবলে খাওয়ার জন্য। এছাড়া সারেং বাড়ির পশ্চিম পাশের নদীর পাড়েও প্রচুর মানুষ হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিত বিহারিরা। ১৯৯১-৯২ সালে সিটি কর্পোরেশন উল্লেখিত স্যুয়ারেজ ট্যাঙ্কিটি পরিষ্কার করতে গেলে বেরিয়ে আসে মানুষের হাড়, মাথার খুলি, জুতা, চশমা, গুলির খোসা, বন্দুকের লোহার অংশ, হাতের চুরি ইত্যাদি।
বিহারিরা আমাকে দিয়ে জোর করে লাশ কুয়ায় ফেলতে বাধ্য করত। বিহারিদের হত্যাকাণ্ডের কথা মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে।
সারেং বাড়িতে অবস্থিত দুটি কুয়াই এখন পরিত্যক্ত যার কোনো চিহ্ন এখন নেই। কুয়াগুলোর ওপর গড়ে উঠেছে বস্তি। স্যুয়ারেজ ট্যাঙ্কিটি ভরে গেছে মাটি দিয়ে। তার দক্ষিণে গড়ে উঠেছে হোস্টেল ও উত্তরে কিছু অংশ পড়েছে দেয়ালের ভেতর। হয়তো আর কিছুদিন পর এখানে যে দুটি কুয়া ছিল এটি চিহ্নিত করার মানুষটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
[৬৬] মিরাজ মিজ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত