You dont have javascript enabled! Please enable it! সালুটিকর গণহত্যা ও বধ্যভূমি | সিলেট - সংগ্রামের নোটবুক

সালুটিকর গণহত্যা ও বধ্যভূমি, সিলেট

অপারেশন সার্চলাইট শুরু করার আগেই হানাদার বাহিনীর একটি গ্রুপ সালুটিকরে অবস্থান গ্রহণ করে। শহর থেকে মাত্র পাঁচ মাইল দূরে এই সালুটিকরেই অবস্থিত সিলেট বিমানবন্দর। তাই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কাছে সালুটিকরের বিরাট গুরুত্ব ছিল। অতিরিক্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ, সৈন্য এবং রসদ সরবরাহের কাজ এই সালুটিকর বিমানবন্দর দিয়েই সম্পন্ন হতো। আবার প্রথম দফা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে আশ্রয় গ্রহণ করে এখানেই। মোটামুটি তাদের একটি দুর্গ হিসেবেই বিমানবন্দর ও পার্শ্ববর্তী রেসিডেন্সিয়াল স্কুলকে গড়ে তোলে। ২৫ মার্চের পরে বিমানবন্দরের সামান্য পশ্চিমে চেঙ্গের খালের পাশে তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে পাকবাহিনী। এই সাথে মোতায়েন করা হয় ছোটখাটো একটি দলও। তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল গণহত্যা। চলে নারী নির্যাতন, লুটতরাজ এবং অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য কাজকর্ম। শুধু তাই নয়, নদীর ঘাটের সাবেক নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করে তারা ‘করাচি বন্দর’। সে বন্দরে অবস্থান গ্রহণকারী পাকহানাদারদের বিভক্ত করা হয় বিভিন্ন দলে। একটি দলের দায়িত্ব তথাকথিত পাকিস্তানের সংহতিবিরোধীদের ধরে এনে জড়ো করা। দ্বিতীয় দলকে নিযুক্ত করা হয় নারী সংগ্রহের জন্যে। একই সাথে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের দায়িত্বও পালিত হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দায়িত্ব অর্পিত হয় অপর একটি গ্রুপের ওপর। স্থানীয় লোকজন এই বাহিনীকে বলত ‘জল্লাদ বাহিনী’।
এ সময় প্রতিদিন দলে দলে নিরস্ত্র বাঙালিকে পাকবাহিনী ধরে আনত সিলেট শহরসহ বিভিন্ন চা বাগান ও গ্রাম থেকে। তারপর নিয়োজিত জল্লাদ দিয়ে হত্যা করা হতো তাঁদের। বিভিন্ন বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসার পর পাক সৈন্যরা তাঁদের বাইশটিলায় এনে হত্যা করে। তাঁদের হত্যা করার কোনো কারণও জানা যায়নি। নয়াটিলার সুখাই শব্দকর ভারতে যাওয়ার পথে পাকবাহিনী তাঁকে হত্যা করে।
জেনকার গ্রামে বাস করতেন তাজউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। তাঁকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। বাড়িসহ পুরো পীরেরগাঁও পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি পাষণ্ডরা। মইয়ার চরের ওয়াতির আলীকেও বিনা প্ররোচনায় হত্যা করে পাকবাহিনী। এ সময় প্রায় প্রতিদিনই চেঙ্গের খাল দিয়ে অসংখ্য লাশ ভেসে যেত।
লাখাউর হাজী কুটি মিয়া, পোড়াবাড়ির গাটনা এবং তাঁর তিন ভাগ্নেসহ মালনিছড়ার চারজন শ্রমিককে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনা দল।
স্থানীয় লোকজনের ধারণা, একাত্তরের নয় মাসে পাকবাহিনী শুধু সালুটিকর ঘাটেই তিন শতাধিক লোককে হত্যা করেছে। এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়, বৈশাখ মাসের শেষদিকে এক সাথে সালুটিকর ঘাটে হত্যা করা হয় ২২ জনকে। নওয়াগাঁওয়ের আবদুল আলীম চৌধুরী জানান, ১৫ এপ্রিল হাত-চোখ বাঁধা অবস্থায় দু’জনকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা এখানে হত্যা করে। যেসব মিলিটারি এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে, তাদের একজনের নাম বঙ্কা খান। ছারিয়ার মুজিবুর রহমান জানান, লাল পাগড়িওয়ালা মিলিটারিরা ১০ জনকে জিপে করে নিয়ে আসে। তাঁদের সবাইকে গুলি করে নদীতে ফেলে দেয়।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত