সাহাপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা ও অন্যান্য গ্রাম গণহত্যা, পাবনা
২৫ এপ্রিল সুপরিকল্পিভাবে ছখানা গ্রামজুড়ে চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। আনুমানিক সকাল দশটার দিকে পাকশী কাগজকল ক্যাম্প থেকে পাকসেনা ও অবাঙালিদের দু’টি দলের একটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে অগ্রসর হয় সাহাপুরের দিকে। আর একটি দল রূপপুরের মাঝ দিয়ে পাকুড়িয়া হয়ে লক্ষ্মীকুণ্ডার দিকে। পাকবাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবে এসব গ্রামের মানুষ প্রাণভয়ে বাবুলচারা, দীঘা, কামালপুর, চরকুড়ালিয়ার দিকে ছুটতে থাকে। যেসব নারী-শিশু-বৃদ্ধ পালাতে পারল না তারা পাক পিশাচদের নরমেধযজ্ঞের শিকার হলো। প্রাণভয়ে অনেকে নদী পার হয়ে কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল বার শ বিঘায় আশ্রয় নিল। সমস্ত দিন ধরে হত্যা ও ধ্বংসের তাণ্ডব চালিয়ে পাকবাহিনী বিকেলের দিকে পাকশী ফিরে যায়। ওই দিন রূপপুর গ্রামের আসগর ও দুজন অশীতিপর বৃদ্ধাসহ ১৩ জন নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়। দাদাপুরের হাটের ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন নর-নারীকে পাক-পশুরা হত্যা করে। লক্ষ্মীকুণ্ডা গ্রামের মুচিদের সমস্ত পাড়াটিই ভস্মীভূত করা হয়। আর সেই সাথে কাফের নিধনের পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে দরিদ্র মুচিদেরও হত্যা করা হয় নির্বিচারে। পাকুদিয়ার বৃদ্ধ স্কুলমাস্টার উম্মেদ আলী মৌলভীসহ দশ-বারোজন নিরীহ গ্রামবাসীও পাক পশুদের হাতে নিহত হন। সাহাপুরে গ্যাদা মিস্ত্রি, আরশেদ, মহাদেবপুরের বদি খোনকার ও তার ছেলেসহ বহু নাম-না-জানা মানুষের লাশে সেদিন ছেয়ে গিয়েছিল ঐ অঞ্চলটি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল শতাধিক ঘরবাড়ি। ঐ দিন পাক বর্বরতার শিকার হয়েছিলেন দুই শতেরও অধিক নর-নারী।
[১৭] আবুল কালাম আজাদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত