You dont have javascript enabled! Please enable it! সিংড়া থানা হেড কোয়ার্টার নির্যাতন কেন্দ্র | নাটোর - সংগ্রামের নোটবুক

সিংড়া থানা হেড কোয়ার্টার নির্যাতন কেন্দ্র, নাটোর

নাটোর জেলার সিংড়া থানা হেড কায়ার্টারে যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী যুবতী মেয়েদের ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন করত। এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ড. সুজিত সরকার বলেন, তখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সে সময় নাটোরের সেন্ট লুইস স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়তেন তিনি। জুনের প্রথম দিকে, হোস্টেল থেকে পালিয়ে বাড়িতে এসে দেখেন বাবা-মা ঠাকুরমা কেউ নেই। মাস খানেক বাড়িতে থেকে পরবর্তীতে ভারতে চলে যান। সেখানে পরিবারের সকলের সঙ্গে দেখা হয়। ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের কার কী প্রয়োজন তার খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। পরে ইনফরমার হিসেবে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে দেশে আসেন। এ সময় তিনি গ্রামের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। একদিন রাজাকাররা তাঁদের পুকুরে মাছ ধরতে এলে তিনি নিষেধ করায় তারা তাঁকে মারতে থাকে এবং গ্রামের মানুষের অনুরোধ সত্ত্বেও রাজাকাররা তাঁকে সিংড়া থানা হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যায়। যেটা বর্তমানে রেজিস্ট্রি অফিস, সেটা তখন পাকসেনাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ছিল। এখানে একটি ঘরে পাকসেনারা বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের ধরে এনে আটকে রাখত এবং নির্যাতন করত। ক্যাম্পের মাঠে ঘাস বিচালি পরিষ্কার করা, পানি আনা ছিল তাঁর কাজ। খাবার বরাদ্দ ছিল এক বেলার জন্য। কোনো কারণে একটু ভুল হলেই রাজাকাররা মারধর করত। এ অবস্থায় একদিন তিনি প্রচণ্ড নির্যাতনে জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরে দেখেন ঐ মেয়েদের ঘরে তাঁকে রাখা হয়েছে। শুধু পেটিকোট পরা উদভ্রান্ত মেয়েরা তার সেবা করছিলেন। তিনি তাদের নাম জিজ্ঞেস করায় অনেকেই বলতে চাননি। তবে হাসিনা ও পারুল নাম দুটি নাম জানতে পেরেছিলেন। সেদিন থেকে মেয়েদের সাথে একটু যোগাযোগ হয় তার। ড. সুজিত দেখেছেন প্রায় দিন পাকসেনারা এসে এসব মেয়ের মধ্যে যারা শারীরিকভাবে সুস্থ এবং দেখতে ভালো তাদের দেখিয়ে দিয়ে যেত। সন্ধ্যোর দিকে রাজাকাররা এসব মেয়েকে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যেত। এসব রাজাকার মধ্যে মজিবর রহমান এবং শালমারা গ্রামের জলিলের নাম মনে করতে পারেন তিনি। তাঁকে যখন এ ক্যাম্পে নেয়া হয় তখন তিনি ২১ জন মেয়েকে দেখেছিলেন। পরে দিনে দিনে সংখ্যা কমে যাচ্ছে দেখে তিনি অন্য মেয়েদের জিজ্ঞাসা করেন, আপা বাকি মেয়েরা কোথায়? জানতে পারেন যারা অসুস্থ হয়ে যেত তাদের অন্যত্র নিয়ে মেরে ফেলা হতো। ড. সুজিত নিজেই এসব মেয়েকে অসুস্থ হতে দেখেছেন। তাদের শরীরে নির্যাতনের কারণে জায়গায় জায়গায় ঘা হয়ে যাচ্ছিল, যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তপাত হতো, তবুও রেহাই পেত না তাঁরা। দু-একজন পাগল হয়ে ভুল বকতেন। একদিন রাজাকাররা ঘরের ভেতরে মেয়েদের ধর্ষণ করার সময় সুজিতকেও ধর্ষণে বাধ্য করার চেষ্টা করে। তারা মেয়েদের যৌনাঙ্গে তাঁর মুখ চেপে ধরে ঘষে দেয়। তিনি পানি চাইলে প্রস্রাব করে তাঁর মুখে ঢেলে দেয়। মেয়েদের ওপর হানাদারদের পাশবিক নির্যাতন, পরবর্তী সময়ে বীভৎস উল্লাসের স্মৃতি আজও চোখ বুজলে দেখতে পান তিনি।
[৩৪] দিলরুবা বেগম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত