You dont have javascript enabled! Please enable it! সাদিপুর গণহত্যা | সিলেট - সংগ্রামের নোটবুক

সাদিপুর গণহত্যা, সিলেট

শমসেরনগর বিমান ঘাঁটিতে প্রচণ্ড আঘাত হানার পর মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর পর্যন্ত পাকহানাদার বাহিনীকে ধাওয়া করে নিয়ে যায়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সিলেট শহরে আশ্রয় নেয় পাকসেনারা। কিন্তু ৮ এপ্রিল সিলেটে মুক্তিবাহিনী পরাজিত হয়ে পশ্চাদপসরণ করলে পাকবাহিনী আবার সাতিপুর-শেরপুরের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় তারা নির্বিচারে মানুষজনকে হত্যা করে। দ্বিতীয়বার সাদিপুর আসার পথে হানাদার সৈন্যরা কাগজপুর এলাকায় হত্যা করে এক টগবগে যুবক মাসুক আহমদকে। তিনি সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কোনো বাক্যব্যয় না করে গাড়ি থেকেই মাসুক আহমদকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পাকবাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটাবার পর রাজপথ ছেড়ে পাকবাহিনী প্রবেশ করে গ্রামে। যেখানে যাকে পায় তাঁকেই ধরে বন্দি করে হায়েনারা। একসময় আটক লোকজনকে একত্র করা হয় বিশ্বনাথ থানার সাদিপুর ফেরিঘাটে। তাঁরপর তাদের দুজন দুজন করে একত্রে বাঁধা হয় রশি দিয়ে। সেই অবস্থায় দাঁড় করানো হয় তাঁদের একটি সারিতে। এবার প্রতি জোড়া আলাদা করে গুলি ছোড়া হয় দেহগুলো লক্ষ্য করে। এভাবে মৃত্যুর হিমশীতল কোলে এক এক করে আশ্রয় নিলেন আলী বক্স, বেটু মিয়া, টেনাই মিয়া, তরণী চন্দ্র বৈদ্য, খয়ের উদ্দিন চৌকিদার ও লদই। বাম পা হারিয়ে গুরুতর আহত হন আফাজ বকস্। পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। গজিয়া গ্রামের কাছন মিয়াও হায়েনাদের হাতে শরীরের একটি অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গুত্বকে বরণ করেছেন।
পাকবাহিনীর অভিযান এরপরও থামেনি। এবারে সাদিপুর গ্রামে তারা হামলা চালাতেই অসহায় নিরস্ত্র মানুষেরা একটু আশ্রয়ের প্রত্যাশায় ছুটে চলল হাওর- প্রান্তর আর বনজঙ্গলের দিকে। নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে কেবল মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে লাগলেন তাঁরা গাছতলায়। কিন্তু না, সবাই পালিয়ে যেতে পারলেন না। পলায়নপর অবস্থাতেই পাকবাহিনী হত্যা করে কয়েকজন নিরীহ মানুষকে। হত্যা করা হয় গজিয়া গ্রামের করম উল্লাহকে। পুড়িয়ে দেয়া হয় বহু বাড়িঘর। এভাবে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। এ-গ্রাম থেকে সে-গ্রামে হানা দিয়ে ফিরতে লাগল। যখন যাকে ইচ্ছে তাঁকেই করতে লাগল হত্যা। আগুন লাগিয়ে গ্রামের পর গ্রাম দিল পুড়িয়ে। ভয়ে-আতঙ্কে লোকজন গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে লাগল। অনেকেই এই অন্যায়-অবিচারের প্রতিশোধ নিতে যোগ দিল মুক্তিযুদ্ধে।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত