You dont have javascript enabled! Please enable it! শ্মশানঘাট বধ্যভূমি | জামালপুর - সংগ্রামের নোটবুক

শ্মশানঘাট বধ্যভূমি, জামালপুর

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জামালপুর পৌর এলাকায় এই শ্মশানঘাট। একাত্তরে এই শ্মশানঘাটকে পাকসেনারা বধ্যভূমি হিসেবে বেছে নেয়। এখানে তারা নিয়মিতই গণহত্যা চালাত। পাকিস্তানি সেনারা তাদের সাহায্যকারী আলবদর, রাজাকার এবং শান্তি কমিটির লোকদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঙালিদের চোখ, হাত বেঁধে ট্রাকে করে এই শ্মশানঘাটে নিয়ে আসত। অনেক সময় তারা হঠাৎ করে বাসা-বাড়িতে ঢুকেও ঘুমন্ত লোকদের জোর করে ধরে আনত। বিভিন্ন ক্যাম্পে রেখেও নির্যাতন চালাত। শ্মশানঘাটের নিরিবিলিতে নিয়ে আসা বন্দি বাঙালি লোকদের সারিবদ্ধভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে দাঁড় করানো হতো। পরে গুলি করে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিত। এভাবে শত শত মানুষকে তারা হত্যা করেছে। অন্যান্য অনেকের মতো পাকসেনারা জামালপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানকে পেছনে হাত ও চোখ বেঁধে, নির্যাতন করে ট্রাকে তুলে শ্মশানঘাট বধ্যভূমিতে নিয়ে আসে। তিনি সেনাদের গুলি চালাবার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বসে পড়েন। বুদ্ধি করে হাত-চোখ বাঁধা অবস্থায় নদীতে গড়িয়ে পড়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
পাকবাহিনী যুদ্ধের নয় মাসে জামালপুরে প্রায় পনেরো হাজার নারী-পুরুষ- শিশুকে হত্যা করেছে। নানা প্রকার নিপীড়ন, নির্যাতন, জবাই, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, গুলি করে লোকজনকে মেরেছে। এই গণহত্যা, বধ্যভূমি ও গণকবরের বহু ঘটনা জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
স্বাধীনতার পর শহীদদের স্মরণে জামালপুর শহরে চারটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। এর মাঝে ‘শ্মশানঘাট বধ্যভূমি’ স্মৃতিফলক একটি।
[১৩৭] হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত