You dont have javascript enabled! Please enable it! শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি ও গণকবর | ঢাকা - সংগ্রামের নোটবুক

শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি ও গণকবর, ঢাকা

ঢাকার ১৩ মাইল উত্তরে মিরপুরের উপকণ্ঠে শিয়ালবাড়ি ১৯৭১ সালে ছিল একটি গ্রাম। বর্তমানে এটি মিরপুর ২ নম্বর স্টেডিয়ামের অদূরে প্রশিকা ভবনের পেছন দিকে অবস্থিত। এলাকাটি প্রচুর ঝোপ-জঙ্গল, টিলা, জলাভূমিতে পরিপূর্ণ ছিল। এই বিস্তীর্ণ কিন্তু প্রায় জনশূন্য অঞ্চলকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর এবং মুজাহিদ বাহিনী বধ্যভূমি ও গণকবর হিসেবে ব্যবহার করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরো নয় মাস সময়জুড়ে এখানে হত্যাযজ্ঞ চলেছিল। উল্লেখ্য, এখানে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। কিন্তু পুরো গ্রামের প্রায় সর্বত্র-ঝোপে, জঙ্গলে, গর্তে, কুয়ায় পাওয়া গেছে মানুষের অসংখ্য মাথার খুলি, হাড়। আনুমানিক ৩০-৪০ হাত গভীর দুটি কুয়ার প্রতিটিতে রয়েছে একশ নরকঙ্কাল। সব কঙ্কালের হাত পেছনে বাঁধা। এখানে হাজার হাজার নরকঙ্কালের স্তূপ গড়ে ওঠার কারণ হিসেবে অনুমান করা হয়- প্রথমত, মিরপুর থানায় (শিয়ালবাড়ির কাছাকাছি) নেয়ার কথা বলে গাবতলী, দারুস সালাম থেকে যাত্রীবাহী বাসগুলো এখানে নিয়ে আসা হতো। অতঃপর যাত্রীদের হত্যা করা হতো। দ্বিতীয়ত, বিহারি অধ্যুষিত মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার পর তাদের লাশ এখানে এনে ফেলা হতো। অনেক বুদ্ধিজীবীকেও এখানে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়া ২নং সেকশনের মেথরপাড়ার মেথররাও এসব ঘটনা দেখেছে। কিন্তু ভয়ে সকলেই নিশ্চুপ ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩-৭ গাড়ি বোঝাই বাঙালিদের এখানে এনে হত্যা করা হতো। কোমরে রশি, পেছনে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় লাইনে দাঁড় করে তাদের গুলি করা হতো। তবে বেশির ভাগকে জবাই করে হত্যা করা হতো। শেষ দিকে বন্দিদের সকলকে জ্যান্ত অবস্থায় হাত- পা বেঁধে কুয়াতে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্বেও এখানে গণহত্যা চলেছে। আরো জানা গিয়েছে যে, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র এক বিহারি কিশোরই এখানে বাঙালিদের জবাই করত। স্বাধীনতার পর তার কোনো সন্ধান পাওয়া না গেলেও তার পিতা অনেক দিন জীবিত ছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিরপুর বিহারিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বিহারিরা তাদের নির্যাতনের অনেক আলামতও বিনষ্ট করে ফেলে। যেমন- পেট্রোল ঢেলে অনেক নরকঙ্কল ধ্বংস করে। তাছাড়া কঙ্কাল ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল যাতে বোঝা না যায় যে এগুলো মানুষের দেহাবশেষ। এসব নরকঙ্কাল অনেকের লাশ সে সময় স্থানীয় গ্রামবাসী মিরপুর পুলিশকে অবহিত করলেও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শিয়ালবাড়িতে স্থাপিত স্মৃতিসৌধটি ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান উদ্বোধন করেন।
[২১৮, ৩৫৩, ৩৭৭] রোজিনা কাদের

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত