শিল্প এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নির্যাতন, নারায়ণগঞ্জ
শিল্পনগরী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা। হাজার হাজার শ্রমিকের প্রাণের স্পন্দন মিশে আছে কলকারখানার প্রতিটি যন্ত্রের সাথে।
সকল যুগের সমস্ত অত্যাচার, হত্যা, ধর্ষণ লুণ্ঠনকেও ছাড়িয়ে গেল পাকবাহিনী। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় প্রবেশ করেই শুরু হলো তাদের গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ। গোদনাইল বাজারটা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।
লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ধরে নিয়ে গেল বার্মা ইস্টার্নে। এদের সঙ্গে হাত মেলাল লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের পিয়ন সবদার খান এবং তার পুত্র ইয়াকুব খান। এলাকায় কান্নার রোল পড়ে গেল।
রাত ১২টার দিকে হানাদাররা কয়েকজনকে ছেড়ে ২১ জনকে আটকে রাখে। এই ২১ জনের মধ্যে ছিলেন খোকা মিঞা। যে প্রথম বঙ্গভবনের (সাবেক গভর্নর হাউস) উড্ডীয়মান পাকিস্তানি পতাকাটি নামিয়ে পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। পাকিস্তানি পতাকা পোড়ানোর দৃশ্যটি তখন ইয়াকুব খানের দৃষ্টিগোচর হয়। ইয়াকুব খান ঘটনাটি জল্লাদদের জানানোর পরই তার ওপর অত্যাচারের মাত্র গেল বেড়ে। সবাইকে হাত-পা বেঁধে বার্মা ইস্টার্নের পদ্মা অয়েল কো. লি. জেটিতে দাঁড় করাল। গর্জে উঠল জল্লাদ বাহিনীর অস্ত্র। শীতলক্ষ্যার জল রক্তে একাকার হলো।
বার্মা ইস্টার্নে নিরীহ যুবক ও নারীদের ধরে আনত পিশাচরা। মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করত। এলাকার রাজাকাররাও ছিল তৎপর। মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা মাত্র খবর পৌঁছে দিত হানাদার শিবিরে। এতে এলাকাবাসীর ওপরও চলত অকথ্য নির্যাতন। মৃত্যু বিভীষিকায় তটস্থ হয়ে থাকত গ্রামবাসী। বার্মা ইস্টার্নের জেটিতে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত সমাজসেবক রণদাপ্রসাদ সাহা ও তাঁর ছেলে ভবানীপ্রসাদ সাহাকে।
আদমজী জুট মিল ছিল পাকসেনাদের ক্যাম্প। এই থানায় এটি ছিল বড় ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় ধরে আনা হতো অগণিত বাঙালিকে। পাকসেনা ও তাদের দোসরদের হাতে জিম্মি ছিল এলাকাবাসী।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত