You dont have javascript enabled! Please enable it!

লোহারমহল গণহত্যা, সিলেট

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে আড়াই মাইল পশ্চিমে কুশিয়ারার ঠিক উত্তর তীর ঘেঁষে লোহারমহল গ্রাম। এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিলেন তখন আওয়ামী লীগের সমর্থক। বাড়িঘর ও সহায়-সম্পদের টানে মাত্র দুজন বাড়িতে ছিলেন। এঁরা মুক্তিবাহিনীর জন্যে বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ করে পাঠাতেন। এ গ্রামেরই পুরঞ্জয় দাশের বাড়িতে রাজাকাররা তাদের ছাউনি তৈরি করে। গ্রামবাসীর ওপর চালায় অকথ্য নির্যাতন। পাক পশুদের পদলেহী এই বাহিনীর অত্যাচারের খবর মুক্তিবাহিনীর কানে গেলে রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গ্রামের লোকজনকে ধরে ধরে রাজাকাররা তাদের ক্যাম্প প্রহরায় নিযুক্ত করত। ঘটনার রাতেও ১২ জন গ্রামবাসী প্রহরায় ছিলেন।
গভীর রাতে মুক্তিবাহিনীর দামাল ছেলেদের আক্রমণে পাকবাহিনীর দোসররা শেষে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। পুরো ক্যাম্পই মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। তারপর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং রসদপত্র নিয়ে জোয়ানরা চলে আসে ভারতে।
ঘটনার পরের দিন কাকডাকা ভোরে জকিগঞ্জ থেকে লোহারমহল গ্রামে আসে পাকবাহিনীর এক বিরাট দল। এসেই গ্রামবাসীকে ডেকে একত্রে জড়ো করে। তারপর প্রায় ৩০০ লোককে নিয়ে আসে স্থানীয় ডাকবাংলোয়। এখানে এনে তাঁদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। এক সময় দিন শেষে আসে রাত। আগের রাতের লোহারমহলের রাজাকার ক্যাম্প প্রহরায় নিযুক্ত ১২ জন নিরস্ত্র বাঙালিকে আলাদা করে পাক হায়েনারা এবং তাদের নিয়ে যাওয়া হয় সেই বধ্যভূমিতে। বন্দিদের দিয়ে খোঁড়ানো হয় গর্ত। তারপর সেই গর্তে ঢুকতে বাধ্য করা হয় ১২ জন জীবন্ত মানব সন্তানকে। রাতের আঁধারে সেই গর্তের ভেতরেই গুলি করে হত্যা করে তারা তাঁদের। লাশগুলো ফেরত নিতে দেয়নি পাকবাহিনী শুধু মাটিচাপা দিয়ে রাখে গণকবরের মতো করে।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!