শংকর মাধবপুর গণহত্যা, কুড়িগ্রাম
দিনটি ছিল ২৫ অক্টোবর। পাকবাহিনী অগ্রসর হচ্ছে আঁকাবাঁকা জলপথে। চিলমারী যেতে যেতে তাই নেমে পড়ে শংকর মাধবপুর গ্রামে। তীরে উঠেই দ্রুত ছুটে যায় গ্রামের ভেতর। ত্বরিত গ্রামে করে অগ্নিসংযোগ। তা-ও এক প্রান্ত থেকে শুরু করে অন্য প্রান্ত অবধি। ভয়ে পলায়ন করতে থাকে গ্রামবাসী। তাদের পিছু পিছু ছোড়ে ওরা গুলি। একটি নয় দুটি নয়, শত শত গোলা। সে বুলেটের অনেকগুলোই বিদ্ধ হয় গ্রামবাসীর বক্ষে। পশুপাখিও তাদের টার্গেট হয়েছে। প্রাণ দিয়েছে। পুড়ে ছাইভস্মেও পরিণত হয়েছে বহু গৃহপালিত পশুপাখি। একই সাথে একই গুলিতে সেখানে প্রাণ দিয়েছে মানুষ এবং গরু। একই স্থানে পড়ে ছিল গৃহস্বামী এবং তার প্রিয় কুকুরের মৃতদেহ।
পাষণ্ডরা সেদিন অবলীলায় নারী ধর্ষণ করেছে সেখানে। স্বামীর চোখের সামনে স্ত্রী হারিয়েছেন সম্ভ্রম। পিতার দেহের ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে কন্যাকে। এমন নির্মমতা, এমন পাশবিকতা কখনো দেখেনি কেউ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন অর্ধশতাধিক নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি। তাদের মধ্যে ছিলেন :
১. আবদুর রহমান, ২. মোকছেদ আলী, ৩. মোহাম্মদ আলী, ৪. খোরশেদ আলী, ৫. আবদুল বারী, ৬. কুতুব আলী, ৭. মন্তাজ আলী দেওয়ান, ৮. বাদশা দেওয়ান, ৯. আবদুল গনি, ১০. আয়নাল হক, ১১. ফজল হক, ১২. পাছালী শেখ, ১৩. মোকছেদ আলী (২), ১৪. মোহাম্মদ রুস্তম, ১৫. জুরান শিকদার, ১৬. নূরুল ইসলাম, ১৭. আজিজুল হক, ১৮. আজিজুর রহমান, ১৯. ময়ান শেখ, ২০. হেলাল বেপারী, ২১. নতুব আলী, ২৩. জব্বার আলী, ২৪. মেজান শেখ, ২৫. হযরত আলী, ২৬. লাল চান, ২৭. এন্তাজ আলী, ২৮. আবুল হোসেন, ২৯. আয়েন উদ্দিন, ৩০. কছিম উদ্দিন, ৩১. আছমত আলী, ৩২. আবদুল আজিজ, ৩৩. সোবহান বেপারী, ৩৪. বিষু শেখ, ৩৫. আয়োবী বেওয়া, ৩৬. মফিজ উদ্দিন, ৩৭. আবদুল আজিজ (২), ৩৮. ইনুছ শেখ, ৩৯. সিদ্দিক আলী, ৪০. মজিদ সরকার, ৪১. সায়েজ আলী, ৪২. তোরান মোল্লা, ৪৩. আবদুল গফুর, ৪৪. সোয়াগি বেওয়া, ৪৫. আরজ উল্লাহ্ প্রমুখ।
[৪৭] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত