শাসনগাঁ দেওয়ানবাড়ি নির্যাতন কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকসেনারা নারায়ণগঞ্জের শাসনগাঁ দেওয়ানবাড়িতে ২টি ক্যাম্প করে। এখানে এক প্লাটুনের বেশি সৈন্য ছিল। গ্রামের নিরীহ যুবকদের ধরে বাঙ্কার তৈরির কাজে লাগিয়ে দেয়।
শাসনগাঁ গ্রামের পাইপ কোম্পানিতে ছিল খানসেনাদের প্রধান ক্যাম্প। এই ক্যাম্পগুলোর চতুর্দিকে তৈরি করে অজস্র বাঙ্কার। রাজাকার বদিউজ্জামান ও মোস্তফা আসানউল্লাহসহ অনেক যুবককে ধরে এনে বাঙ্কার তৈরি করতে বাধ্য করে। আসানউল্লাহ বাঙ্কার তৈরি করতে অস্বীকার করলে পাকসেনারা তাকে অনেক নির্যাতন করে। বুট দিয়ে লাথি মারে, রাইফেলের বাঁট দিয়ে মেরে গর্তে ফেলে দেয়। ভয়ে সে গর্তের ভেতর থেকে উপরে ওঠার সাহস হারিয়ে ফেলে।
দূর থেকে এ দৃশ্য দেওয়ান মো. মনির উদ্দীন মাতবরের বড় ছেলে দেখতে পেয়ে গর্তের সামনে এগিয়ে যায়। আসানউল্লাহকে এখান থেকে নারায়ণগঞ্জ চলে যেতে বলে পাকসেনাদের এখানে আবার ফিরে আসার আগেই। তার কথামতো আসানউল্লাহ সেখান থেকে সরে পড়েন। রাজাকার বদিউজ্জামান ও মোস্তফা শাসনগাঁ গ্রামের বশীর উদ্দিনের মেয়ে নাসিমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে পাক আর্মিদের হাতে তুলে দেয়। এছাড়া তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬-৭ জন যুবতী ধরে এনে হানাদারদের ক্যাম্পে দেয়।
শাসনগাঁ দেওয়ানবাড়ির সিদ্দিকুর রহমান দেওয়ান পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনের করুণ কাহিনী উল্লেখ করেছেন—
আমাদের বাড়িতে পাক আর্মিরা ক্যাম্প করে ডিসেম্বর মাসে। ভয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাই। আমার বাবা বাড়িতেই অবস্থান করেন। পাক আর্মিরা বাড়ির ভেতর দুটি বাঙ্কার করে। আমাদের টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার সব লুট করে নেয়। নতুন নতুন হত্যা পরিকল্পনা করে এই ক্যাম্পে বসে। বাবাকে তাদের খাবার জোগাড় করে দিতে হতো। খাবার দিতে অস্বীকার করলে চালাত অকথ্য নির্যাতন। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে হাঁস-মুরগি, পোলার চাল আনার নির্দেশ দিলে বাবা অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ঘর থেকে পোলার চাল বের করে নিয়ে যায়। রাজাকার মোস্তফা, বদিউজ্জামান, মহিউদ্দিন শাসনগাঁ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগি জোর করে ধরে নিয়ে আসত। আটককৃত যুবতীদের ওপর চালাত পাশবিক নির্যাতন। পুরো বাড়িটি তখন পাকিস্তানিদের নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত