লালপুর [গোপালপুর] গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ, মৌলভাবাজার
১৯৭১ সালের ৫ মে সকালে আক্রান্ত হয় গোপালপুর বাজার। পাকসৈন্যের সহায়তায় স্থানীয় ও ঈশ্বরদীর অবাঙালি সম্প্রদায় এই পৈশাচিক গণহত্যায় মেতে ওঠে। ১১ জন বিভিন্ন পেশার মানুষ শহীদ হন এখানে। এদর মধ্যে ছিল ২ জন ছাত্র, ৫ জন সাধারণ ব্যবসায়ী, ১ জন স্টেশন মাস্টার, ১ জন ডাক্তার, ১ জন কোচোয়ান ও ১ জন সাধারণ মানুষ। এরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রতিরোধ দলের সদস্য।
বাজারের পর হানাদার বাহিনী ত্বরিত বেগে মিলে প্রবেশ করে এবং গেটগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফ্যাকটরির অনেকে আত্মগোপন করার চেষ্টা করলেন। চেনা অবাঙালির ইঙ্গিতে ফ্যাক্টরি থেকে বের করে আনা হলো কিছু শ্রমিক ও কর্মচারীকে। অনুরূপভাবে জেনারেল অফিস থেকেও ম্যানেজারসহ তাঁর স্টাফকে। একত্র করল অফিসের সামনে। গণবন্দিরা ছিলেন ৫১ জন। তাঁদের তাড়িয়ে আনা হলো স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে নাট্যমঞ্চের ছোট্টমাঠে। তারপর এক অবাঙালির ইঙ্গিতে পুকুর ঘাটে গণহত্যায় অংশ নেয় ২৭ জনের মতো পাকসৈন্য এবং ডজনখানেক অবাঙালি। জেনারেল ম্যানেজার লে. এম. এ. আজিমকে ক্যাপ্টেন জিগ্যেস করেছিল, মেজর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজাকে কারা মেরেছিল। তিনি বলেছিলেন, তারা কেউ এখানে উপস্থিত নেই। তারা পালিয়ে গেছে ভারতে। এরপর গুলির নির্দেশ হয়। বিনীতভাবে সবার প্রাণভিক্ষা চান আজিম সাহেব। বলেন, ‘এরা সবাই নির্দোষ লোক। দোষ কিছু করলে আমিই করেছি। আমাকে মার আর এদের ছেড়ে দাও।’
ক্যাপ্টেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলেও অবাঙালিদের রায়ই বহাল থাকে। তিনদিক থেকে অনেকগুলো স্টেনগান গর্জে ওঠে। লুটিয়ে পড়ে অনেকগুলো প্রাণ। যাদের গুলি লাগে নি কিংবা আহত হয়ে ছিটকে পড়েছিল পানিতে, ডুব-সাঁতারের ভেতরেও তাদের ওপর চালানো হয় গুলি। আর যাঁরা আহত অবস্থায় পড়েছিলেন পানির ধারে বা সিঁড়িতে, তাঁদের প্রতি চলে বেয়নেট চার্জ। স্থাপন করে এক পৈশাচিকতার নজির। এই গণহত্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় ৭ জন এবং অক্ষত দেহে ২ জন বেঁচে যান। আহতরা বহু ভোগান্তির পর সুস্থ হয়ে ওঠেন; কিন্তু খন্দকার এমাজউদ্দিন মানসিক ভারসাম্যতা হারিয় আজো অর্ধউন্মাদ অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন। দুটি ছেলেও এই হত্যাযজ্ঞে তাঁর সাথে ছিল। একজন মারা যায়। আরেকজনকে মৃত অবস্থায় তিনি দেখতে পান।
[১২] গোপাল দত্ত
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত