You dont have javascript enabled! Please enable it!

লালমাই গণহত্যা ও গণকবর, কুমিল্লা

একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার এমন কোনো থানা, গ্রাম, শহর ছিল না, যেখানে পাকবাহিনী হামলা করেনি। কুমিল্লা সেনানিবাস ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাম্প তৈরি করেও তারা হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে। কুমিল্লায় তাদের অনেকগুলো ক্যাম্পের ভেতর কোতোয়ালি থানার সিঅ্যান্ডবির ডাকবাংলোর ক্যাম্প ছিল সে রকমই একটি। পাকসেনারা ডাকবাংলো ক্যাম্প থেকে লালমাইসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে চালিয়েছে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, নির্যাতন আর জ্বালাও-পোড়াও।
লালমাইয়ের এ এলাকাকে সে সময় ক্যান্টনমেন্ট মনে করা হতো। শহরে হত্যা করা সম্ভব হতো না বলে এখানেই সব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতো। এলাকার লোকদের থেকে জানা যায়, ২৬ মার্চ পাক সেনাবাহিনী লালমাই পাহাড় দখল করে গাছপালা কেটে, সেলিং করে, বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে অরাজকতা শুরু করে। যুবক ছেলেদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হাত-পা পরীক্ষা করে। তারা কৃষিকাজ করে কিনা? মুক্তিবাহিনীতে গিয়েছে কি না? এ ধরনের নানান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। লোকজনকে ধরে এনে বিনা বিচারে, বিনা অপরাধে হত্যা করে, মারতে মারতে গর্তে ফেলে দিত। ত্রিশজন লোককে মেরে তারা এক ব্যক্তির বাড়ির একটি গর্তে ফেলে রাখে। এখানে মেয়েদের ওপরও তারা নির্যাতন করেছে। লালমাই কলেজের প্রিন্সিপালের রুমে আটকে রেখেও বহু লোককে তারা হত্যা করেছে। সকালে রক্ত ছাড়া সেখানে আর কিছু দেখা যেত না। এই এলাকায় দশ হাজারেরও বেশি নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা করে, মাটি চাপা দেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
এই এলাকায় ৫০-৬০টি গণকবর রয়েছে। এখানকার প্রতি ইঞ্চি জায়গা খুঁড়লে পাওয়া যাবে মানুষের হাড়গোড় আর কঙ্কাল।
[৩৪, ১৩৭] হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!