You dont have javascript enabled! Please enable it! লালমাটিয়া নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি | সিলেট - সংগ্রামের নোটবুক

লালমাটিয়া নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি, সিলেট

নগরীর অদূরে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের লালমাটিয়া স্থানটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদারদের নির্যাতন কেন্দ্র। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষ এখানে প্রাণ হারিয়েছেন।
সিলেট শহর থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ অভিমুখে শিববাড়ী বাজার ও পারাইরচক এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এই লালমাটিয়া। ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক ও ঢাকা-সিলেট রেললাইনের পশ্চিম পাশে বিস্তীর্ণ ধানি জমি যেখানে শুরু হয়েছে, সেখানে শুরুতেই কয়েক একর উঁচু জায়গা। এর কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি খাস ভূমি। এলাকাবাসী জানান, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পরপরই পাকহানাদার বাহিনীর একটি দল অবস্থান নেয় ঐ উঁচু স্থানটিতে। ঐ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত পাকসেনাদের এই ক্যাম্পটি বহাল ছিল। তারা ১০ থেকে ১২টি তাঁবু টানিয়ে আশপাশে বাঙ্কার খুঁড়ে এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। পাক হানাদাররা ক্যাম্পের চারপাশে ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের পাহারা বসায়। স্থানটি সিলেট শহরের প্রবেশমুখ হওয়ায় রাস্তার পাশেও তারা বসায় চেকপোস্ট। সেই ক্যাম্প থেকে পাকবাহিনী সিলেট শহর, দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জের একাংশের নিয়ন্ত্রণ করত। এই চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পাকসেনারা যাদের সন্দেহ করত তাদের পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে নিয়ে যেত। ক্যাম্পে যাওয়া লোকজনের মধ্যে বেশির ভাগই প্ৰাণ নিয়ে ফিরতে পারতেন না। শহর থেকেও মাঝে মাঝে লাশ নিয়ে ফেলা হতো ঐ স্থানে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই বাঙ্কারের শুকনো মাটিতে দেখা গেছে রক্তের দাগ। স্থানীয় জনসাধারণ জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের এই বাঙ্কারে নিয়ে আসা হতো, তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হতো। তাই এই স্থানটির নাম লালমটিয়া। মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক বছর পর্যন্ত এই এলাকায় কৃষকরা লাঙল চষতে গেলে লাঙলের সাথে মাটির নিচ থেকে উঠে আসত মানুষের হাড়গোড়।

[২৩১] সংকলন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত